কমলগঞ্জে ৭দিনে শিশু হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়নি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২২, ৬:৫২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কেছুলুটি গ্রামে ফিরদি মিয়ার ঘরের পিছনের গর্ত থেকে গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার মেয়ে ফাতেমা জান্নাত মৌয়ের (৬) লাশ উদ্ধার করা হয়। সে কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
গত ৯ মার্চ (বুধবার) বিকেলে নিখোঁজের ২ ঘণ্টা পর ঘরের পিছনের গর্ত থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর রাতেই মা রুবি আক্তার বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনার ৭ দিন পরও পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরেজমিন তদন্ত করেও হত্যার কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
আতঙ্কে ৭ দিন ধরে কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি কমে গেছে। আতঙ্ক কাটাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শিক্ষা বিভাগ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালেও আতঙ্কে এ গ্রামে শিশুদের অনেকটা গৃহবন্দি করে রাখছেন বাবা-মায়েরা।
লাশ উদ্ধারের রাতেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালান। রহস্য উদঘাটনে নিহত শিশুর মা, বাবা, বোন, ভাই ও ভাবীকে একাধিকবার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে ও র্যাব শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রামে তদন্ত করেও গত ৭দিনে কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
কেছুলুটি গ্রামের ব্যবসায়ী সুফি মিয়া ও গৃহবধু ডলি বেগম বলেন, ঘটনার মূল কারণ বের না হওয়ায় গ্রামের মা ও বাবারা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ও সকালে মক্তবে যেতে দিচ্ছেন না। কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা তাদের বিদ্যালয় ও মক্তবে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ক্লাস শেষে বাড়ি নিয়ে আসেন।
তারা আরও বলেন, সন্ধ্যার পর বাড়ির দরজায় কেউ কড়া নাড়লে বা অতিথি এসে কড়া নাড়লে প্রথমে ভয়ে ঘরের ভেতর শিশুদের কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। পরে পরিচয় জেনে দরজা খোলা হয়।
কেছুলুটি গ্রামের সমাজ সেবক ও কমলগঞ্জ উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি দুরুদ আলী বলেন, এ শিশু হত্যার কোন রহস্য উদ্ধার করতে না পারায় এক শ্রেণির প্রতারক গ্রামের সাধারণ মানুষজনের তালিকা তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে দিচ্ছে। যাতে তাদেরকে সন্দেহের তালিকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফলে গ্রামে নতুন করে সাধারণ মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কেছলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার আহমেদ ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আতঙ্কে না থেকে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে গ্রামে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জয় কুমার হাজরা বলেন, তিনি কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনসহ গ্রামবাসীদের সাথে সচেতনতামূলক মত বিনিময়ও করেছেন।
শিশু হত্যাকান্ডের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, সুর্নির্দিষ্ট কারো সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি, তবে পারিবারিক বিরোধ বা ব্যক্তিগত বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোর তদন্ত চলছে। এ জন্য শিশুর মা, বাবা, ভাই, বোন ও ভাবীকে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদী দ্রুত সময়ে এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বের হবে।