বিএনপিতে ভরসা নেই মান্না-নুরদের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২২, ৯:০০ অপরাহ্ণ
সরকারবিরোধী অবস্থানে থেকে একই মঞ্চে কর্মসূচি পালন করছেন ডা. জাফরুল্লাহ, মান্না, সাকি ও নুররা। তারা বলছেন, বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না তারা। বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকাও হয়নি। এ অবস্থায় এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতো জোটের যুগপৎ আন্দোলনের কথাও ভাবনায় আছে তাদের।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটাতে চান তারা। কিন্তু পালাবদলে বিএনপির হাতে ক্ষমতা গেলেই বর্তমান সংকটের সুরাহা হবে বলে মনে করে না ছোট কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। বিএনপির মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তাদেরও। তবে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার কতদিন মেয়াদের হতে পারে তা নিয়ে রয়েছে মতানৈক্য। এ অবস্থায় বিএনপিকে সামনে রেখে বড় জোটে শামিল হতে এখনো ইচ্ছুক নয় তারা।
বিএনপির সঙ্গে তিন বছরের কিছু বেশি সময় আগে জোটবদ্ধ হলেও দলটির সঙ্গে এখনই ‘সরাসরি জোটে’ যেতে চান না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলছেন তারা। তার আগে তাদের পরিকল্পনায় আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তার একটি রূপরেখা জনগণের সামনে আনার কথা ভাবছেন তারা।
গত বছর থেকে একই মঞ্চে কর্মসূচি পালন করছেন ডা. জাফরুল্লাহ, মান্না, সাকি ও নুররা। তারা বলছেন, বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না তারা। বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকাও হয়নি। এ অবস্থায় এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতো জোটের যুগপৎ আন্দোলনের কথাও ভাবনায় আছে তাদের।
গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ গত বছর জুড়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিয়েছে। এর শুরুটা হয় মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি দিয়ে। সংগঠন তিনটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষেও সম্মিলিত কর্মসূচি দেয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও নেতা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শুরু থেকেই জাফরুল্লাহ-মান্না এতে সম্পৃক্ত।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট কিংবা ভিন্নভাবে আন্দোলন দুটোর চেষ্টাই করছি। যেহেতু বিএনপি এখনও আমাদের ডাকেনি তাই বিএনপির জোটে যাব কিনা এখনই বলতে পারছি না।
‘বিকল্প হিসেবে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলেছি। জামায়াতকে ছাড়তে চাইছে না বিএনপি। তাই এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মত ৭ দল, ৮ দল, ৫ দল ও জামায়াত- এমন একটি আন্দোলন হতে পারে। তিন জোটের ওই আন্দোলনে তো জামায়াতও ছিল।’
কেয়ারটেকার সরকারের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকারের পর যে সরকার হবে সেটার টাস্ক থাকবে অনেক বড়। আমরা যে কেয়ারটেকার সরকার করেছিলাম তার আয়ু ছিল ৩ মাস। কিন্তু তা আদায়ে লেগেছিল ২ বছর। এখন জিনিসপত্রের যে হুলুস্থুল দাম, এই দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো দল কি নির্বাচন করবে? সেজন্যই বলেছি এ সরকার অন্তত তিন বছর করা হোক।
‘তবে জাফরুল্লাহ ভাইয়ের জাতীয় সরকারের ধারণা এটা নয়। আসলে তার জাতীয় সরকারের ব্যাখ্যাটা খুব স্পষ্টও নয়। তবে জাতীয় সরকার বলা হলেও আমি আপত্তি করবো না।’
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমানের এই সংকট থেকে উত্তরণে আমরাও একটি রাজনৈতিক ঐক্য অনুভব করছি। কিছু ছোট ছোট দল ও ব্যক্তি, যারা সমাজে প্রভাব রাখেন- তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। সে ক্ষেত্রে পর্য়বেক্ষণ হল, ক্ষমতা এক দল থেকে আরেক দলে গেলে রাষ্ট্রের যে চরিত্র সেটার কোনো পরিবর্তন হবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা কমন বোঝাপড়া হচ্ছে যে রাষ্ট্রের কিছু মৌলিক পরিবর্তন দরকার।’
কিভাবে আন্দোলন করবেন জানতে চাইলে নুর বলেন, ‘বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমের পরিবর্তনসহ বেশকিছু দাবি দেব। যারা কিছু দাবিতে একমত হবে তাদেরকে নিয়ে একটা যুগপৎ আন্দোলন কিংবা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা ভাবছি আমরা।
‘শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মতো ইস্যুনির্ভর আন্দোলন আমরা করতে চাই না। ১৯৯০ সালে যেমন তিন জোটের একটা রূপরেখা ছিল সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই এবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এটার বাস্তবায়ন হোক। আমাদের আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে যে, ন্যূনতম এক থেকে দুই বছরের জন্য একটা নৈতিক ঐকমত্যের সরকার দরকার।’
বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে নিজ দলের আহ্বায়কের বক্তব্য প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘বিএনপি অবশ্যই বড় দল। তাদের আমরা সারথি মনে করি। অবশ্যই তাদেরকে কিভাবে নেওয়া যায় সেটা আমরা ভাবছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা একটা ইস্যু ছেড়ে দিলেই সেটাতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা একটি বৃহত্তর আন্দোলনের কথা বলছি। যেটার সমীকরণ রাজপথেই ঠিক হবে। আর সে আন্দোলনটা যৌথ কিংবা যুগপৎ হতে পারে।’