জুড়ী নদী যেন ভাগাড়, হাকালুকি হাওরের পরিবেশ দূষণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মার্চ ২০২২, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের জুড়ী নদী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে এই নদীর বর্জ্য মিশে পানি বিশাল হাকালুকি হাওরে গিয়ে মেশে। এছাড়া নদীর দুই তীরে রয়েছে দখলদারের অত্যাচার। দীর্ঘদিন ধরে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলায় নদী দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও মানুষের অসচেতনতা এর জন্য দায়ী। অবিলম্বে জুড়ী নদী দূষণমুক্ত করে হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর অংশ থেকে জুড়ী নদীর উৎপত্তি। নদীটি উপজেলার ফুলতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি উপজেলা সদরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে।
বাংলাদেশ অংশে এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিলোমিটার। দখল ও দূষণে খরস্রোতা নদীটি নাব্যতা হারিয়ে ‘মরা জুড়ী নদী’তে পরিণত হয়েছে। বছরখানেক আগে নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়, পাশাপাশি নদীর ৮ দশমিক ৭০০ কিলোমিটার পুনর্খনন করা হয়। এখন নদীটি মৃতপ্রায়।
ভবানীগঞ্জ ও কামনীগঞ্জ বাজারের সংযোগ সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। বাজারের লোকজন নদীর তীরে মলত্যাগের জন্য খোলা শৌচাগার স্থাপন করেছেন। দুর্গন্ধে নদীর আশপাশেও অবস্থান করা যায় না।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী জালালুর রহমান বলেন, জুড়ী বাজারের বর্জ্য ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে নদীতে। নদীদূষণের পাশাপাশি বর্ষায় এসব বর্জ্য হাকালুকি হাওরে গিয়ে মেশে। এতে মাছসহ জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পরেছে। জুড়ীসহ নদী ও হাওরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদী যেন দূষণমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, বর্জ্য ফেলার স্থান না থাকায় নদীতীরেই তা ফেলা হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রকল্পের মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার। এ জন্য উপজেলার চালবন্দর ও কাপনাপাহাড় এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি স্থান প্রাথমিকভাবে দেখা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাব। বাজারের ব্যবসায় সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলার ইউএনও সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশও দিয়েছি। বর্জ্য ফেলার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা হবে। নির্দেশ অমান্য করে নদীতে বর্জ্য ফেললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’