পাল্টা জবাব নুনু মিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের অভিযোগে ক্ষেপেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া। বলেছেন; ‘বিশ্বনাথে জামায়াত বিএনপি’র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেবো না। এতে যদি আমার মৃত্যু হয়, আমি মরবো।’ ৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পে এমপি মোকাব্বির খানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়া এখন সিলেটজুড়ে আলোচনায়। এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসনও। এই অবস্থায় গতকাল বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ের প্রকল্প এবং এমপি মোকাব্বির খানের অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন নুনু মিয়া। এই বক্তব্য নিয়ে এখন চলছে অনেক জল্পনা। আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় এমপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন- ‘একটি রাস্তা দেখান; যেটি নিজ উদ্যোগে নিয়ে এসে করে দিয়েছেন। সাড়ে তিন বছরে সরকারের রুটিন প্রকল্পগুলোই করেছেন। এর বাইরে একটি প্রকল্পও করেননি।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে নুনু মিয়া জানান, ‘সংসদ সদস্য একটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। মূলত কারণটা হচ্ছে; জামায়াত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছেন মোকাব্বির খান। সাড়ে তিন বছরে করোনাকালীন সময়ে একদিন বিশ্বনাথে দেখিনি। প্রত্যেকে সাক্ষী আছেন; দিন রাত হাটে ঘাটে আমি ছিলাম। সে সময় বিশ্বনাথে কোন অবস্থায় মানুষ আছে বা কোনো ম্যাসেজ কোনো সময় দেননি। প্রতিহিংসার কারণে এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে সরকারের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছেন। আমি জীবনে ভাবিনি প্রবাস ছেড়ে এখানে এসে রাজনীতি করবো, জনপ্রতিনিধি হবো। আল্লাহর কৃপায় মায়ের দোয়ায় ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে আজকে আমি এদেশে রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্ব করছি।’
করোনাকালীন সময়ে দুর্গম এলাকায় ছুটে গেছেন জানিয়ে নুনু মিয়া বলেন, ‘বিশেষ করে গরিব মানুষের পাশে আমি ছিলাম। কয়েকটি গ্রামের মানুষ খুবই গরিব। সেটি আমি মাথায় নিয়ে কাজ করছি। গরিবের সেবা করার জন্য মায়ের দেয়া উপদেশ মাথায় রেখে কাজ করছি। সে লক্ষ্য পূরণের জন্য জনস্বাস্থ্যের ৩৯ কোটি টাকার প্রজেক্ট আমি নিয়ে এসেছি। অনেক কষ্ট করে এই প্রকল্প এনেছি। এটা শুধু গরিব মানুষের জন্য। এটা কোনো ধনীর জন্য না। প্রজেক্টটা হচ্ছে টুইন টয়লেট। একটা বাংলা থাকবে, একটা ইংলিশ কমোড। সেখানে থাকবে পানির মোটর। ১০-১৫টা ফ্যামেলিকে পানি সরবরাহ করবো। আর ইংলিশ টয়লেট ব্যবহার করবে প্রতিবন্ধীরা। শাওয়ার থাকবে। গোছল করা যাবে। এটা একটা সুন্দর প্রজেক্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে উপহার দিয়েছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রীর শতভাগ সহযোগিতায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।’
নুনু মিয়া বলেন, ‘উনি একজন পার্লামেন্ট সদস্য। উনাকে চেষ্টা করতে হবে উন্নয়ন কাজ আনার। উনি বসে বসে আমার সঙ্গে হিংসা করে তো কোনো লাভ হবে না। উনি যেহেতু পার্লামেন্ট মেম্বার, উনার সঙ্গে মন্ত্রীদের সম্পর্ক আছে। দুটো উপজেলা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের জন্য কেন তিনি প্রকল্প নিয়ে আসেন না- প্রশ্ন তোলেন উপজেলা চেয়ারম্যান।’ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নুনু মিয়া বলেন, ‘আপনি তো এখন পর্যন্ত বলতে পারবেন না; একটা রাস্তা আপনি নিয়ে এসেছেন। যেটা অটো বরাদ্দ আসে সেখান থেকে হয়তো আপনি রাস্তা করেছেন, এটা তো স্বাভাবিক। আমার মনে হয় না কোনো একটা জায়গা থেকে উনি রাস্তা নিয়ে এসেছেন। আমি বিশ্বনাথের উন্নয়নের নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এর কারণ আমার পেছনে দু’জন সৎ মন্ত্রী থাকার কারণে। একজন হচ্ছেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও অপরজন হচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই দু’জন ভালো মানুষের সঙ্গে থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
নুনু মিয়া জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন সেটি মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ। এটা হিংসামূলক অভিযোগ। এটা একটা ষড়যন্ত্রও। আমি যতদিন থাকবো সরকারের নির্দেশমতো কাজ করে যাবো।’ প্রকল্প সম্পর্কে নুনু মিয়া জানান, ‘প্রকল্প কোন অবস্থায় আছে আমি জানি না। শুধু ডিও লেটার নিয়ে এসে বিশ্বনাথের মানুষকে অবগত করেছি। এখনো টেন্ডারই হয়নি। তবে পিডি নিয়োগ করা হয়েছে। টেন্ডার হতে দুই মাস সময় লাগতে পারে। যেটা টেন্ডার হলো না, এখনো দুই মাস বাকি সেটাতে কীভাবে দুর্নীতি হয়- প্রশ্ন ছুড়েন নুনু মিয়া।’ ইতিহাসে কেউ ষড়যন্ত্র করে টিকে থাকতে পারে না দাবি করে নুনু মিয়া বলেন, ‘মোকাব্বির খানও ষড়যন্ত্র করে টিকে থাকতে পারবেন না। এখনো সময় আছে আপনি মন্ত্রণালয় সচিবালয় গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেন হয়তো কিছু নিয়ে আসতে পারবেন। খামোখা আমার উন্নয়নে, সরকারের উন্নয়নে বাধা দেবেন না। এখনো ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, আমিও কিন্তু আপনার ভাষায় কথা বলতে পারবো।’ এদিকে প্রকল্পের দুর্নীতির প্রসঙ্গে সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খান জানিয়েছেন; প্রকল্প শুরু না হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন টাকা নিচ্ছেন। বিশ্বনাথে এর ভূরিভূরি উদাহরণ আছে। টিউবওয়েল, স্যানিটেশন দেয়ার নামে চেয়ারম্যানের লোকজন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার জন্য আমি মন্ত্রী মহোদয়কে অবগত করেছি। ইতিমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। দুর্নীতি না করলে তো অভিযোগ আসতো না।’