‘স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০২:৪২,অপরাহ্ন ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উপর গত ১৬ জানুয়ারি লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এসময় টিয়ারেশ নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেণেডও ছুঁড়ে পুলিশ।
ওইদিন শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। শরীরে ৮৩ টি স্প্লিন্টার রয়েছে তার। সম্প্রতি ঢাকায় অস্ত্রোপচার শেষে সিলেট ফিরেছেন সজল।
শনিবার শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকারের অবস্থান ও নিজের শারিরীক অবস্থা জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রদান করেন সজল কুন্ডু।
এতে তিনি লিখেন- ১৬ জানুয়ারি মারাত্মক আহত অবস্থায় প্রথমে কিছুদিন সিলেটে এবং গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রায় ১৫ দিন যাবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরমধ্যেই আমার হাতে একটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যাতে ডান হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়। এখনো আমার মাথা, ঘাড়, বুক, পেট-পীঠ, হাত-পাসহ শরীরে বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে।
সজল বিবৃতিতে বলেন, প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশংকা থাকায় চিকিংসকেরা আরও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমাকে হয়তো এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে নতুন নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কাও অমূলক নয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী আমি সিলেটে ফিরেছি। গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করে এবং সিলেটে ফেরার পর আমাদের সতীর্থ ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে কিছু ব্যাপারে আমি অবহিত হয়েছি যা আমাকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে।
সজল বলেন, গত ১২ তারিখে আমাদের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি একইসাথে বলেছিলেন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তা অচিরেই খুলে দেয়া হবে। কিন্তু তার আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলাসমূহ তোলার বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমি দেখতে পাইনি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এছাড়াও গত ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ যে নির্জলা মিথ্যাচার করেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বলেছেন “সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যা পরাভূত হয়েছে”!
সজল আরও বলেন, ১৬ জানুয়ারি যে নারকীয় হামলা হয়েছে তার একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই, আমার কাছে সত্য হচ্ছে আমার শরীরে এখনো বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারগুলো, এতদিনের অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা, আমার আহত সতীর্থদের আর্তনাদ। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের মিথ্যাচার ও মনগড়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি।
আমি জানতে পেরেছি, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আমাকে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, আমার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও আমাকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। আমাকে চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। আমার বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে আমার অসচ্ছল পরিবার, সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে যে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশংকায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিয়ে যে কারণে আমাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তা থেকে আমাদের সবাইকে মুক্তি দেয়া হোক পরিশেষে আমি আমার সতীর্থ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সমস্বরে আচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই আবেদনই করতে চাই।