সুনামগঞ্জে ৭ বারের চেয়ারম্যান বাবার হাত থেকে ইউপির দায়িত্ব নিলেন ছেলে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মাঝে-মধ্যে বিরতি দিয়ে ৭ টার্ম প্রায় ৩৫ বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পর এবার অবসর নিলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার। বয়সের ভারে ন্যুব্জ করুণা সিন্ধু তালুকদার এবার বিদায় নিলেও তার দীর্ঘদিনের সাজানো কর্মস্থল তুলে দিলেন তার ছেলের হাতে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক আবেগঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
ছেলে কাজল চন্দ্র তালুকদারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব, জামালগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম কুমার সাহা, পরিষদের সচিব অজিত কুমার রায়, সব ইউপি সদস্য ও সদস্যাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
জানা যায়, বর্তমানে বয়সের ভারে কাবু করুণা সিন্ধু তালুকদার (৯৬) গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তার স্থলে এবার ওই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন তার দ্বিতীয় ছেলে কাজল চন্দ্র তালুকদার।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে শপথ গ্রহণ করেন ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান।
আবেগঘন পরিবেশে বিরতি দিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ফেনারবাঁক ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনকারী চেয়ারম্যান পিতা করুণা সিন্ধু তালুকদারের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তারই ছেলে কাজল চন্দ্র তালুকদার। পিতার হাত থেকে পুত্রের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে ওই ইউনিয়নের উৎসুক জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত অতিথিসহ সবাই যেন এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
যুগান্তরের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আমার বাবা বিভিন্ন সময়ে ৭ বার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। উনি সারাজীবন মানুষের সঙ্গে কাজ করেছেন। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ তিনি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় এই ইউনিয়নের মানুষ আমাকে উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব ইউনিয়নবাসীর পাশে থেকে তাদের সেবা করার, বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার।
তিনি বলেন, আমার বাবার মতো মানুষের মন জয় করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে আমি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
ছেলের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত পিতা করুণা সিন্ধু তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, আমি এই ইউনিয়নে ৭ বারের চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবা করেছি। মানুষের সুখে-দুঃখে সারাজীবন পাশে ছিলাম। মানুষের এই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে আমার ছেলেকে ইউনিয়নবাসী এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। মানুষের ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে। আমার ছেলের হাতে এ ইউনিয়নের দায়িত্ব তুলে দিতে পেরে আমি যারপরনাই আনন্দিত। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
তিনি বলেন, আমি আশা করি আমার ছেলে এ ইউনিয়নের মানুষকে আমার মতই সেবা দিবে,সবার সুখ-দুঃখে পাশে থাকবে। আমি ফেনারবাঁক ইউনিয়নের সব শ্রেণির মানুষের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, করুণা সিন্ধু তালুকদার দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তারই ছেলে কাজল চন্দ্র তালুকদারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন তিনি। এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য বিদায়ী ৭ বারের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার ছয়হারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের একবার রিলিফ চেয়ারম্যান ও ৬ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার ছেলে কাজল চন্দ্র তালুকদার প্রথমবারের মতো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।