এক মাসেই অন্তরঙ্গ, পরে এলো নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২:১৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
এক মাস আগে বন্ধুর বাসায় পরিচয় হয় তরুণ-তরুণীর। এরপর মাত্র কয়েক দিনেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সু-সম্পর্ক যা পর্যায়ক্রমে গিয়ে দাঁড়ায় অন্তরঙ্গতায়। এই ১ মাসের মধ্যেই তারা একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে ৫ থেকে ৭ বার। যে সম্পর্ক এখন গড়িয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ পর্যন্ত।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ সংবাদ প্রচার হয়েছে। যার ভিত্তিতে এরই মধ্যে অভিযুক্ত তরুণ মনির হোসেন শুভকে রাজধানীর পুরাণ ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে ধরে এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় ঐ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। র্যাব জানিয়েছে, অভিযুক্ত শুভ বিবিএ’র শিক্ষার্থী। আর ঐ তরুণী কি করেন? কোথায় থাকেন? সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঐ তরুণী অভিযোগ করেছেন- বাসায় আটকে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে। একই অভিযোগ তিনি পুলিশের কাছেও করেছেন। বিশেষ করে আটককৃত মনির হোসেন শুভ’র দিকেই তার অভিযোগের তীর।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে এ সংক্রান্ত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শুভ’র পাশাপাশি আলামিন নামের আরো এক তরুণের বিরুদ্ধেও ঐ তরুণীর একই অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আটক শুভকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি- আটক মনির হোসেন শুভর সঙ্গে ঐ তরুণীর ১ মাস পূর্বে পরিচয় হয় তার অন্য একজন বন্ধুর মাধ্যমে। শুভর বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মধ্যে ৫ থেকে ৬ বার দেখা হয় এবং তারা পূর্ব পরিচিত।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৪ দিন আটকে রেখে ‘ধর্ষণের’ বিষয়ে শুভকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করলে, শুভ উত্তরে জানায়- এই সময়ের মধ্যে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে তবে সেটি সু-সম্পর্ক থাকায় এবং স্বেচ্ছায়।
তবে গণধর্ষণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শুভ বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও ওই তরুণীর সঙ্গে একত্রে সময় কাটানোর বিষয়টি সে স্বীকার করেছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তেই ‘ধর্ষণের’ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলেই এই ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য তুলে ধরতে পারবেন। এখনো ঐ তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ পাইনি।
আরো পড়ুন> ছাত্রীকে চারদিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে ফেলা হলো ঢাবি এলাকায়
শুভ ঐ তরুণীর সঙ্গে ‘দেখা করেছে’ বলার মানে ‘ধর্ষণ’ কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ঐ তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। কারণ, এখানে মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়টি রয়েছে। সে এরই মধ্যে ৫ থেকে ৭ বার ঐ তরুণীর সঙ্গে দেখা করেছে। প্রত্যেকবারই তাদের মধ্যে একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়েছে বলেই শুভ আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে বলেছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শুভ বলছে, ঐ তরুণীকে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটি স্বেচ্ছাতেই হয়েছে।
অভিযোগকারী ঐ তরুণীর পরিবারের সঙ্গে র্যাব যোগাযোগ করেছে কিনা? কিংবা ঐ পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে কিনা? অথবা ঐ তরুণীর পরিবার স্পষ্ট করে র্যাব বা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেছে কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তরে র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার আল মঈন বলেন, আমরা আসলে ঐ নারী সঙ্গে এখনো কথা বলার সুযোগ পাইনি। কিন্তু, ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ঐ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অভিযোগকারী তরুণী এবং তার পরিবারের সঙ্গে নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কথা বলবেন। এরপরই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে কলেজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ৪ দিন আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-৩ গতকাল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর চকবাজার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলোচিত ‘ধর্ষণের’ প্রধান অভিযুক্ত মোঃ মনির হোসেন শুভকে (২২) আটক করে।
ঐ তরুণীর অভিযোগে জানা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় সে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষকের বাসায় যাওয়ার পথে লালবাগ কেল্লার মোড়ে শুভ ও আলামিন তার মুখে রুমাল চেপে রিকসায় তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ৪ দিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।
পরবর্তীতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ৩ টায় তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র রাজু ভাস্কর্যের সামনে অসুস্থ অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়। একজন পথচারী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।