মন্ত্রী’র সফরে প্রত্যাশা খুলবে পাথর কোয়ারী: রক্ষা পাবে লাখো শ্রমিকের জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৪১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন খ্যাত হিসেবে পরিচিত গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী হাজারো শ্রমিক ব্যবসায়ী রোজগার বঞ্চিত হয়ে পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সিলেটের গোয়াইনঘাট মানেই পাথরের রাজ্য, এক সময়ের এ পরিচয়টুকু এখন হারিয়ে যাচ্ছে। খরস্রোতা পিয়ান নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত অফুরন্ত পাথরের ভান্ডার থেকে পাথর আহরন করে নৌকা এবং ট্রলি দিয়ে তা পরিবহন করে যে মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল, আজ তারা তীব্র খাদ্য সংকটে নিপতিত।
কাজ নেই, রোজগার নেই এ অবস্থায় বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত পাথর কেন্দ্রিক উপজেলার হাজার হাজার মানুষের জীবন আজ চরম দুর্বিষহ। বিকল্প কোন রোজগার না থাকায় উপজেলায় শোনা যাচ্ছে দুর্ভিক্ষের পদ ধ্বনি।
দেশের বৃহত্তম এই উপজেলার পাথর কোয়ারীতে পাথর আহরন করে এ অঞ্চলের মানুষগুলো পরিজন নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই জীবিকা নির্বাহ করতো। শ্রমিক কর্তৃক আহরিত এ পাথর বিপনন এবং প্রক্রিয়া করণে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজারো স্টোন ক্রাশার। এসব স্টোন ক্রাশারে আরও লক্ষাধিক শ্রমজীবি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়ে এক সময়ের অবহেলিত অঞ্চল ক্রমশঃ সমৃদ্ধ জনপদে রুপান্তরিত হয়। স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত পাথরের গুনগত মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। পাথরের আর্শীবাদে উপজোলার এ প্রান্তিক জনপদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিপুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় একমাত্র পাথরকে কেন্দ্র করেই সৃষ্ট জীবিকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্র সিলেটের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
বোমা (ড্রেজার) মিশিনের ধ্বংসযজ্ঞ, টিলা ভূমির ক্ষতিসাধন, পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি ইত্যাদি অপকর্ম চরম আকার ধারণ করলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। স্থানীয় ও জাতীয় গমাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত প্রচারিত হলে সাড়া পড়ে যায় সর্বত্র। নড়ে চড়ে উঠে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয় টাস্কফোর্স। ধারাবাহিক অভিযান পরিচালিত হয় পাথর কোয়ারী এলাকায়। অনমনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারনে নির্মূল হয় বোমা মিশিন, তথা পাথর খেঁকোচক্র। শ্রমজীবি মানুষগুলোও তাই চেয়েছিল। বংশ পরস্পরায় তারা যে পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকার নির্বাহ করছিলো তাদের জীবিকার প্রধান অন্তরায় পাথর খেঁকো চক্র উৎখাত হওয়ায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল।
এ যেনো আাগছা ছাঁটতে বৃক্ষ নিধন। বিগত দুই বছর ধরে কোয়ারী লীজ না হওয়া এবং পাথর আহরনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কারনে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষগুলোকে পড়তে হয়েছে অকুল সাগরে। এ অবস্থাকে আগাছা ছাঁটতে বৃক্ষনিধন বলে মন্তব্য করছেন পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।পরিবেশ ধ্বংসকারি নিপাত যাক শ্রমিকেরা তাদের অধিকার ফিরে পাক।
পাথর কোয়ারী এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক বোম মিশিন তথা পরিবেশ ধ্বংস কারিদের দমন করতে যেয়ে স্বাভাবিক পাথর আহরন বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমজীবি মানুষগুলো চোঁখে শর্ষে ফুল দেখছে।
খুলে দেয়া হোক শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র। পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় পাথর আহরন থেকে বঞ্চিত দিন মজুর অভাবী মানুষগুলো চরম দুর্দশায় নিপতিত হয়েছে। এদের পাশাপাশি পাথর বিপননের জড়িত হাজারো ব্যবসায়ি- শ্রমিক রোজগার ও কর্মহীন হয়ে গভীর সংকটের গ্যড়াকলে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে দেনা শোধ করতে না পেরে ঋণ খেলাপীর কারণে মামলায় জেরার হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া পাথর পরিবহনে নিয়োজিত পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা তাদের ক্রয় করা ট্রাক ও ট্রাকটরের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এক কঠিন অবস্থার মুখো মুখি এসে দাড়িয়েছেন। এ গভীর সংকট থেকে উত্তরনের জন্য পাথর কোয়ারী হতে পরিবেশ সম্মত সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরনের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকগুলো। তাদের দাবী অনতিবিলম্বে পাথর কোয়ারী খোলে না দিলে সংকটে নিপতিত লাখো মানুষের জীবনে চরম মানবেতর অবস্থা নেমে আসবে। পাথর খেঁকো পরিবেশ বিধ্বংসীরা দুর্বৃত্তদের দমন করে কঠোর প্রশাসনিক মনিটরিং ব্যবস্থার অধীনে পাথর কোয়ারী খোলে দেয়া হোক।
উপজেলার সিংহভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা পাথর আহরনের উপর নির্ভরশীল। লাখো শ্রমজীবি মানুষের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওযায় গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছেন লোকগুলো। কর্মহীন হয়ে পড়া বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর বিকল্প রোজগার না থাকায় ভবিষ্যতে এ জনপদে চরম খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন অনেকে। এদিকে দীর্ঘ কালীন সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকায় পর্যটন স্পটে পর্যটন ব্যবসায়ীরাও হুমকির সম্মুখীন। পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক ও ক্রেতার চাইতে ব্যবসায়ী বেশি। তাই কর্মসংস্থান হারিয়ে উপজেলার প্রতিটি পরিবারে আট থেকে দশজন সদস্য বেকার হয়ে পড়েছেন। অমানিশার কালো চাদরে ঢাকা পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন জীবিকা। এমন যেন না হয়, শিল্পী জয়নুল আবেদিনের মত দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকতে হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি’র চার দিনের সরকারি সফরে তার নিজ নির্বাচনী এলাকার নিম্নআয়ের মানুষের খোঁজ খবর নেবেন এমন প্রত্যাশা উপজেলাবাসীর এবং উপজেলায় বসবাসকারী নিম্নআয়ের মানুষজনের কর্মসংস্থানের একমাত্র সম্বল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে তিনি সদয় হবেন। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী’র গোয়াইনঘাট সফরে উপজেলাবাসীর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়কের প্রতি সুদৃষ্টি দেবেন এমন প্রত্যাশা সকলের।
উপজেলার আপামর মানুষের দাবী-পরিবেশের নির্মলতা বজায় রেখে নিরাপদে পাথর আহরনের সুযোগ দিয়ে রক্ষা করা হবে লাখো মানুষের জীবন। শ্রমজীবি মানুষগুলো তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।
জৈন্তা বার্তা