জৈন্তাপুরে মামলা নিয়ে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৩:৫৯,অপরাহ্ন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ওয়েছ খছরু:
চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে তোলপাড় চলছে জৈন্তাপুরে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে দরবস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারকে। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জৈন্তার ১৭ পরগনার মুরুব্বি ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি- অযৌক্তিকভাবে মামলায় বাহারকে আসামি করা হয়েছে। মহিষ চোরাচালানের ঘটনা। সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল সীমান্ত এলাকা অনেক আগে থেকেই চোরাচালানের রুট হিসেবে পরিচিত। জৈন্তাপুরের চিহ্নিত চোরাকারবারিরা ওই রুটে ভারত থেকে গরু ও মহিষ নিয়ে আসেন। গড়ে উঠেছে চোরাচালানের বাজারও। আর চোরাচালানের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জৈন্তাপুরের সচেতনমহলও।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করে চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছিলো না। গত ২রা ফেব্রুয়ারি সকালে দুটি পিকআপ ভ্যানে করে লালাখাল সীমান্ত দিয়ে ৫টি মহিষ নিয়ে আসছিলো চোরাকারবারিরা। তাদের দেখে ধাওয়া করে টহলে থাকা বিজিবি জওয়ানরা। বিজিবি’র ভাষ্যমতে- স্থানীয় পাখিবিল এলাকায় গিয়ে দুটি পিকআপ ভ্যান সহ মহিষ আটক করেন। এরপর বিজিবি জওয়ানরা আটক করা ৫টি মহিষ তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে পারলেও দুটি পিকআপ ভ্যান নিতে পারেননি। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক নেতারা ওই দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শ্রমিকরা দাবি করে- পিকআপ ভ্যানের মধ্যে মহিষ পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বিজিবি ও পরিবহন শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে বিষয়টি সমাধানের জন্য নিয়ে আসা হয় স্থানীয় দরবস্ত বাজারে। সেখানে আসার পর পিকআপ ভ্যান দুটি ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। বিষয়টি সমাধানের জন্য ডাকা হয় ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারকে। বিজিবি জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাহার সেখানে আসেন। তিনি শ্রমিকদের পক্ষে অবস্থান নেন। এ কারণে শ্রমিকরা জোরপূর্বক বিজিবি’র অভিযানে আটক হওয়া দুটি পিকআপ ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। জৈন্তাপুরের জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে দাবি করেছেন- চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারকে বিজিবি’র পক্ষ থেকে প্রথমে ফোন দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি ফোন রিসিভ না করার কারণে বিজিবি’র পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়। চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আটককৃত দুটি পিকআপ ভ্যান ছেড়ে দিতে বিজিবি সদস্যদের অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিজিবি পিকআপগুলো ছেড়ে দেন। এরপর দরবস্ত বাজারের দোকানে বসে বিজিবি সদস্যদের নিয়ে নাস্তাও করেন চেয়ারম্যান বাহার। এদিকে ঘটনার পর দুপুরে বিজিবি’র পক্ষ থেকে মহিষ উদ্ধার ও আটক করা দুটি পিকআপ ভ্যান ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ক্ষেপেছেন জৈন্তাপুরের জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি- বিজিবি চেয়ারম্যান বাহারকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধিকে বিরোধপূর্ণ ঘটনার সমাধান করার জন্য ডেকে নিয়ে এসে মামলায় আসামি করা দুঃখজনক বলেও দাবি করেন তারা। এ কারণে জৈন্তাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান সহ উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা বাহারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এ নিয়ে ইতিমধ্যে সার্বিক বিষয় জানিয়ে জৈন্তাপুরের জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারের উপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা।
এদিকে- বাহারকে আসামি করায় গতকাল বিকালে জৈন্তাপুরের বটতলায় ১৭ পরগনাবাসীর উদ্যোগে বিশাল প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এ সভায় ১৭ পরগনার সালিশ ব্যক্তিত্বরা ছাড়াও উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও পরিবহন শ্রমিক নেতারাও বক্তব্য রাখেন। তারা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। নতুবা বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। জৈন্তাপুরের লালাখাল বিওপি’র বিজিবি কর্মকর্তা মো. মাজেদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান বাহারকে অভিযানে আটক গাড়ি দুটি ছাড়িয়ে নিতে সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ওইদিন চেয়ারম্যান বাহার ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে গাড়িগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে যান। যে দুটি গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে সেগুলো চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ ছাড়া, ওই চালানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরও আসামি করা হয়েছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ জানিয়েছেন, বিজিবি এজাহার দাখিল করার কারণে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ওই মামলায় গাড়ি দুটি ছাড়িয়ে নেয়ায় সহযোগিতা করার কারণে চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম বাহারকে আসামি করা হয়েছে। এখন পুলিশ তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাহারকে আসামি করায় জৈন্তাপুরের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু ‘আসামি’ বাহারকে পুঁজি করে পুরো ঘটনাটিকে বিতর্কিত করে তুলেছে চোরাকারবারিরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবি জোরালো অভিযানের কারণে জৈন্তাপুরের সীমান্তে গরু ও মহিষ চোরাচালানের মাত্রা কমে এসেছে বলে জানান তারা।