স্বপদেই কি থাকছেন শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৭:২০,অপরাহ্ন ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষাথীদের অনশন ভাঙার ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও স্বপদেই রয়েছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
সরকারের উচ্চমহলের আশ্বাসের কথা বলে গত ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে এই আশ্বাসের ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন উপাচার্য আছেন বহাল রয়েছেন। তবে কী উপাচার্য পদে ফরিদ উদ্দিন বহাল থাকছেন এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
এদিকে, আশ্বাস পেয়ে অনশন ভাঙলেও দাবি পুরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। মঙ্গলবার দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে আলোক প্রজ্জ্বলন করেন তারা। আজ বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য আন্দোলকারীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পক্ষে। আর কার্যালয়ে না গিয়ে বাসায় থেকেই উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান।
পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশনও শুরু করেন ২৯ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারও প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ জানুয়ারি সকালে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্য ভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
২৬ জানুয়ারি ভোরে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের অনশনকারী ভাঙান অধ্যাপক ড. মহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
অনশন ভাঙানোর পর জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের অনেক উচ্চমহল থেকে কথা বলেছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নাই।
তবে এরপর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও উপাচার্যের পদত্যাগের ব্যাপারে সরকারের পক্ষে থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
এদিকে পুলিশের হামলার ঘটনায় উপার্চাযবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। আন্দোলন চলাকালীন তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্য বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করতে বাধা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন এই উপাচার্য তালেবানি কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, এই উপাচার্যের অধিনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস করতে চাই না। আমরা চাই তিনি দ্রুত পদত্যাগ করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। ড. জাফর ইকবাল স্যার আমাদের বলেছিলেন তাকে সরানোর প্রক্রিয়ার মাস তিনেক সময় লাগতে পারে। এখন এই দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হবে। এই দিক বিবেচনা করে হয়তো আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে কোনো বাঁধা প্রদান করবো না। কিন্তু আমরা চাই উপাচার্য দ্রুত পদত্যাগ করবেন।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট থেকে বন্ধ করা হয়েছে। এখন ক্লাস শুরুর বিষযে উপাচার্যই বলতে পারবেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় একটা ক্রাইসিস মূহুর্ত দিয়ে যাচ্ছে তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।
তিনি বলেন, সব কিছু মিলে বিশ্বদ্যালয়ের বিষয়গুলো এখন আমাদের হাতে নেই। এগুলো সরকারের হাতে চলে গেছে। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ মিলেই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু কখন আসবে কিভাবে আসবে সেটা এখনো জানা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী আসার কথা ছিল কিন্তু তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলসনে থাকায় একটু দেরি হচ্ছে। আমরা যতদূর জানি তিনি আসলেই সিদ্ধান্ত আসবে।