তাহিরপুরে ৭ ইউপির সবকটিতে নৌকার ভরাডুবি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:১০ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচনে সবটিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। সপ্তম ধাপে জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী উপজেলার ৭ ইউপির মধ্যে ৪ ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’এবং ৩টিতে স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে দুজন জামানত হারিয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৬ প্রার্থী। এ ইউনিয়নের সোমবারের ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল অনুযায়ী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জুনাব আলী। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৬ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন আখঞ্জি। তিনি ১ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছেন।
শ্রীপুর উত্তর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ৫ জন। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী হায়দার। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৯৭ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি মো. আবুল খায়ের। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ২০৭ ভোট।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ৯ জন। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ মুরাদ। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৬ ভোট। এই ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান বিশ্বজিত সরকার। তিনি ১ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন।
উপজেলার বাদাঘাট ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ৬ জন। এর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন। তিনি ১১ হাজার ৫০৭ ভোট পান। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মো. সুজাত মিয়া ৪৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে সুজাত মিয়া জামানত হারাচ্ছেন।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ৯ জন প্রার্থী। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাসুক মিয়া। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৬৬ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৯২৪ ভোট।
বড়দল দক্ষিণ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ৬ জন। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইউনুছ আলী। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ২৪৯ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ৭৬৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছেন। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে তিনি জামানত হারাচ্ছেন।
বালিজুরী ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন দুজন। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আজাদ হোসেন। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ১৬২ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন আতাউর রহমান। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৪০১ ভোট।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী নিয়ে বিভিন্ন ইউপিতে ক্ষোভ থাকায় নেতাকর্মীদের অনেকেই মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। আবার কোনো কোনো ইউপিতে নেতাকর্মীরা ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউপিতে পরাজিত আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থী মো. সুজাত মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমি দলের নেতাকর্মীদের পাশে পাইনি। আমার এখানে দলের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। নৌকা রেখে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে। আবার বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, গোটা বিষয়টি রহস্যজনক রয়ে গেল।
উপজেলার সব ইউপিতে নৌকার ভরাডুবি প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল হোসেন খান বলেন, মূলত প্রার্থী মনোনয়নে ভুলের কারণেই এখানে নৌকার এমন পরাজয় হয়েছে। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাদের নাম আমরা তৃণমূল থেকে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তারা মনোনয়ন পাননি। আমি আমার ইউপিতে চারবারের সাবেক চেয়ারম্যান। আমি এবারো মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জয়ী করতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সফল হননি।