সিলেটে রীমার মৃত্যু নিয়ে রহস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫২:৩৯,অপরাহ্ন ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
রীমা রানী দাশ। এক সন্তানের জননী। ছিলেন ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বাও। গোয়াইঘাটের কামাইদ গ্রামে স্বামীর বাড়ি। ওখান থেকেই রীমার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এরপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে জানিয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় মা রীনা দাশ তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে সিলেট আদালতে মামলা করেছেন। আদালত এই আবেদনটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রীমা দাশের মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন এলাকায়। কামাইদ গ্রামের মানুষের কাছে ঘটনাটি রহস্যময়। আর মায়ের দাবি- রীমাকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। এখন সেটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপার চেষ্টা করা হচ্ছে। রীমা দাশের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার গোয়ারগাঁওয়ে। পিতা জীতেন্দ্র দাশ। ২০১৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল রীমা দাশের। গোয়াইনঘাটের কামাইদ গ্রামের ছেলে সুমন দাশের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন রীমা দাশ। ১৪ মাস বয়সী কেয়া দাশ নামের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। মৃত্যুর সময় রীমা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
গত ১৩ই জানুয়ারি সিলেটের আদালতে আবেদন করলে ১৬ই জানুয়ারি আদালতে এ আবেদনের শুনানি হয়। মামলার এজাহারে রীনা রানী দাশ জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী সুমন দাশসহ পরিবারের লোকজন নানাভাবে তার মেয়ে রীমা দাশকে নির্যাতন করে আসছিল। তারা দলবেঁধে তার উপর নির্যাতন চালাতো। এতে রীমা রীতিমতো তটস্থ থাকতেন। প্রায় সময় তিনি নির্যাতনের বিষয়টি তার মাকে জানালেও সংসার টিকিয়ে রাখতে তারা প্রতিবাদ কিংবা আইনের আশ্রয় নেননি। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে রীমা দাশ পিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর মায়ের কাছে তার উপর অত্যাচারের কথা জানায়। স্বামীর বাড়িতে যেতেও বাধ সাধে। কিন্তু সন্তানের কথা চিন্তা করে রীমা দাশকে বুঝিয়ে তার স্বামীর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রীনা রানী দাশ জানিয়েছেন, গত ১লা জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার মেয়ে রীমা দাশের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছিল। তখন রীমা জানিয়েছিল; তার শশুরবাড়ির লোকজন তাকে গালিগালাজসহ নানা অত্যাচার করছে। তার স্বামী সুমন ও আত্মীয় শ্যামল তাকে মারপিট করেছে। ঘটনাটি শোনার পর মেয়েকে ধৈর্যধারণের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্ত রাতে তাদের কাছে উড়ো খবর আসে তার মেয়ে রীমা দাশ আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পরদিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পান। তিনি জানান, তার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তিনি সুমন ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সদুত্তর মিলেনি। বরং একেক সময় একেক জন ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। তাদের কথার মতোই ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ হয়। এবং পিতার বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি এবং থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে এমনটি করা হয়েছে বলে দাবি করেন রীনা রানী। তিনি দাবি করেন- ঘটনার দিন রাতে রীমার স্বামী সুমন ও আত্মীয় শ্যামল তার মেয়ে রীমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। এবং পরবর্তীতে হত্যার ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে রীমার শাড়ি কেটে গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। এজন্য তিনি রীমার মৃত্যু নিয়ে সত্য বিষয় উদ্ঘাটনে আদালতের কাছে আর্জি জানান।
এদিকে, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় তিনি অভিযুক্ত করেছেন রীমা রানী দাশের স্বামী া সুমন দাশ, তার ভাই রূপন দাশ, গফন দাশ ও তার স্ত্রী অঞ্জনা দাশ, মৃত কামিনী দাশের ছেলে গোপিকা দাশ ও তার স্ত্রী জ্যোতি দাশকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কামাইদ গ্রামের গোপিকা দাশের বাড়িতে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। অনেক সময় তাদের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ আসতো।