বিল দেয়নি সিসিক : বন্ধ হলো নগরীর ফ্রি ওয়াইফাই সেবা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪২:১৮,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
২০২১ সালের ২১ মার্চ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) কাছে সিলেট নগরীর ‘পাবলিক ওয়াইফাই সিস্টেম’ হস্তান্তর করেছিলো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এই পুরো সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সিসিকের বিদ্যুৎ শাখার। কিন্তু মাত্র ১০ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে এই বিনামূল্যের ওয়াইফাই সেবা।
৩ মাস ধরে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল বকেয়া থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১২৬টি এক্সেস পয়েন্টের ইন্টারনেট সংযোগ। ‘অর্থাভাবে’ বিল পরিশোধ করতে পারেনি সিসিক।
সিসিক বলছে, তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে বিসিসি। কিন্তু ইন্টারনেট বিল দেওয়ার মতো ফাণ্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এদিকে বিসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, সিস্টেমটি স্থাপনের দায়িত্ব ছিলো বিসিসি’র। এরপর থেকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সিসিকের।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীনে শুরু হয় ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের কাজ। ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট নগরীতে ‘আইপি ক্যামেরা বেইসড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম’ স্থাপন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে অটোমেশন এবং নগরীতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের আওতায়, সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি এলাকায় ১২৬টি এক্সেস পয়েন্ট স্থাপন করে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু করা হয়। প্রতিটি এক্সেস পয়েন্টে ১০ এমবিপিএস করে ডেডিকেটেড ব্যন্ডউইথ প্রদান করা হয়। ফ্রি ওয়াইফাই’র ইউজারনেম (এসএসআইডি) ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ যুক্ত হওয়ার জন্য ব্যবহারকারীকে ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষরে ‘জয়বাংলা’ টাইপ করতে হতো। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ যুক্ত হতেন এই ফ্রি ওয়াইফাই সেবায়। করোনাকালে নগরীর বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী, ফুড ও পার্সেল ডেলিভারি ম্যান এবং অনলাইনে ক্লাস করা শিক্ষার্থীরাও বিনামূল্যে পেয়েছেন এই সেবা। একদিন সর্বোচ্চ দেড় লাখ মানুষ এই ফ্রি ওয়াইফাই সেবায় যুক্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সিসিকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
কিন্তু, গত শনিবার থেকে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের আওতাধীন বিনামূল্যের এই ওয়াইফাই সেবা।
একই প্রকল্পের আওতায় থাকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘আইপি ক্যামেরা বেইসড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম’টিও চলছে ধুকে ধুকে। বন্ধ হয়ে গেছে নগরীর বেশিরভাগ বুদ্ধিমান ক্যামেরা। কোতোয়ালি থানায় অবস্থিত ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমে নেই ইন্টারনেট সংযোগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রজেক্টে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ‘আমরা নেটওয়ার্ক’। ২০২১ সালের মার্চে ফ্রি ওয়াইফাই সিস্টেমটি হস্তান্তরের পর থেকে প্রতিমাসে ‘আমরা নেটওয়ার্ক’কে ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করা হচ্ছিল।
কিন্তু, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ৩ মাসের বিল বকেয়া থাকায় গত শনিবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সেবা। নগরীর ২৬ বিভিন্ন স্থানের ব্যবহারকারীরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামক এসএসআইডিতে ঢুকতে গেলে ‘ডিজেবল’ দেখাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিসিকের বিদ্যুৎ শাখার সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব বিশ্বাসের সাথে। তিনি একাত্তরের কথাকে বলেন, আমরা নগরবাসীকে বিনামূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছিলাম। এই ওয়াইফাই সিস্টেমটি চালু রাখার চন্য ডাটা প্রয়োজন। ১২৬ পয়েন্টের প্রত্যেকটিতে ১০ এমবিপিএস করে ডাটা প্রদান করা হচ্ছিল। এই ডাটা কিনতে হতো আমরা নেটওয়ার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। কিন্তু, ৩ মাসের বিল বকেয়া থাকায় সম্প্রতি তারা ওয়াইফাই এক্সেস পয়েন্টগুলোতে ইন্টারনেট প্রদান করা বন্ধ রেখেছে। বিল পরিশোধ করলে অবশ্য আবারও ইন্টারন্টে সংযোগ চলে আসবে। কিন্তু, সিসিককে তো আলাদা কোনো ফাণ্ড প্রদান করা হয়নি মন্ত্রণালয় থেকে। প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে বিল দিতে হয়। আমরা ইতিমধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে ফাণ্ড দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। মেয়র মহোদয়কেও অবগত করেছি।
সিসিকের বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমীন বলেন, পিডিবি’র কাজের জন্য অনেক সময় ওয়াইফাই’র তার কাটা পড়ে যায়। প্রতিফুট তারের দাম ১৪ টাকা করে। কয়েকটি এক্সেস পয়েন্টের মেশিনও নষ্ট। এগুলো ঠিক করতে বাজেটের প্রয়োজন। সিসিক থেকে এর জন্য আলাদা বাজেট নেই। বর্তমানে মেইনটেনেন্স খরচ বাবদ ৩১ লাখ টাকা এবং প্রতিমাসে ইন্টারনেট বিল বাবদ ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, অর্থ বরাদ্দের একটি আবেদন আইসিটি মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে আমরা প্রেরণ করেছি। এখনো কোনো ফলাফল আসে নি। এটা সম্পূর্ণ সেবামূলক প্রজেক্ট। কিন্তু, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারকে মাসে মাসে বিল দিয়েই জনগণকে এই সেবা প্রদান করতে হয় আমাদের। আমরা চেষ্টা করেছি বিজ্ঞাপনের জন্যও। সিলেটের অনেক বড় বড় ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে গিয়েছি। অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কেউ কেউ বুঝেছেন, কিন্তু সায় দেননি। যদি আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসে, তাহলে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চলমান রাখার জন্য সিসিককে এই খরচ বহন করতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প’র উপ-প্রকল্প পরিচালক মধুসূদন চন্দ বলেন, আমাদের দায়িত্ব ছিলো পুরো সিস্টেমটি স্থাপন করা। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিসিকের। আমাদের কাজ ছিলো শুধু এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা। ২০২১ সালের মার্চে ডিজিটাল সিলেট সিটি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আমরা পাবলিক ওয়াইফাই সিস্টেম’টি সিসিককে হস্তান্তর করেছি। বিল প্রদান এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিসিক। সিসিকের রাজস্ব খাত রয়েছে। তাছাড়া সরকারিভাবেও ফাণ্ড আসে সিসিকের তহবিলে। সেখান থেকেই সিস্টেমটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করতে হবে।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প’র ৯০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে জানিয়ে মধুসূদন চন্দ বলেন, এখন শুধু ওসমানী হাসপাতালের অটোমেশন সিস্টেমটি হস্তান্তর করা বাকি আছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ হবে।