মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশা যেন এক মরণফাঁদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৪২ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ এসব অটোরিকশা এখন একেকটি চলন্ত বোমা। যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে চালক ও যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটাতে পারে।’
কেউ কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ আবার যাচ্ছিলেন কোনো কাজে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার আগেই তাদের অনেকেই না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন। অনেকের হচ্ছে যাওয়ার উপক্রম।
চট্টগ্রামে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব অটোরিকশায় এখন নিয়মিতই বিস্ফোরণ ঘটছে গ্যাস সিলিন্ডারের।
না জেনে এসব অটোরিকশায় চড়ে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। বিপাকে আছেন চালক এমনকি মালিকরাও। অথচ এ বিষয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নেই মাথাব্যথা।
নগরবাসীর অভিযোগ ছাড়াও গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয় বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব বরাবর।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘১২ সিরিয়ালের ২০০৫ মডেলের ১ হাজার ৫টি সিএনজি অটোরিকশা মেয়াদ ফুরিয়েছে অন্তত ২ বছর আগে। এ ছাড়া ২০০১ মডেলের ১৬৬টি অটোরিকশারও একই দশা। এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করে নতুনভাবে রিপ্লেস করার নিয়ম থাকলেও গড়িমসি করছে বিআরটিএ।’
এতে চালক-মালিকরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়ি সচল রেখেছেন। এ সুযোগে পুলিশ প্রশাসনও তাদের নানাভাবে হয়রানি করছে। আর গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা তো আছেই।
মালিকদের ভাষ্য, দুই বছর আগে এসব সিএনজির মেয়াদ শেষ হলেও কাগজপত্র নবায়ন করছে না বিআরটিএ। যে কোনো সময় গাড়িগুলো স্ক্র্যাপ করা হতে পারে- এ শঙ্কায় মেরামতও করা হচ্ছে না। আবার পুলিশি হয়রানি ও যাত্রী না ওঠার অজুহাতে দিনের আয়ও ঠিকমতো জমা দেন না চালকরা।
চালকরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক পুলিশ নগদ টাকা আদায় করে কিংবা মামলা দেয়। মামলা ছাড়ানোর টাকা চাইলেও দেন না মালিকরা। যাত্রীরা উঠলেও ভাড়া দেয় কম। গাড়ি ভেঙে ফেলা হবে এই ভয়ে মালিকরাও গাড়িগুলো মেরামত করেন না। তাই রিফুয়েলিং কিংবা গাড়ি চালানোর সময়ও বিস্ফোরিত হচ্ছে গ্যাসসিলিন্ডার।
সূত্র মতে, গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার গোল চত্বরে সিএনজির গ্যাসসিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় দ্বগ্ধ হন চালক। সিএনজি অটোরিকশাটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। হাটহাজারী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একই দিন রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ফোর স্টার সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে একটি অটোরিকশার গ্যাসসিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় সিএনজি স্টেশনের অফিস রুম ও স্টেশনের টিনশেড উড়ে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা।
এর আগে গত ৯ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার মনটানা ক্লাবের সামনে সিএনজি অটোরিকশাার গ্যাসসিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫ যাত্রী দগ্ধ হন।
২৬ মে দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার কলসীদিঘীর পার এলাকার সিএনজি অটোরিকশার গ্যাসসিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করে নতুন নম্বর প্রদানের বিষয়ে সংখ্যাভিত্তিক একটি তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আশা করছি, এ মাসেই সেটা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিক কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিআরটিএর তথ্য মতে, ২০০১-২০০৫ মডেলের ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করে নতুন গাড়িতে নাম্বার রিপ্লেস করার উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারির আগে ১১ হাজার ৮২৯টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করে নতুন নম্বর দেয়া হয়েছে। বাকি আছে ১ হাজার ৫টি গাড়ি।
মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়ির নম্বর রিপ্লেস করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিএনজি এখন একেকটি চলন্ত বোমা। যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে চালক ও যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটাতে পারে।’