শামীম ওসমানের সঙ্গে মিলেই কাজ করব: তৈমূর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
প্রেসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তৈমূর বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই, কতটুকু পারব জানি না। আমি গণমানুষের জন্য যার সঙ্গে বসা দরকার, তার সঙ্গেই আলোচনায় বসব। আমার এত ইগো প্রবলেম নাই।’
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নৌকার মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর দ্বন্দ্বের কারণে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে বিভাজন স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। তার মতে, ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছেন জনগণ। প্রাধান্য পাচ্ছে না জনস্বার্থ।
আর এ জন্য তৈমূরের ইচ্ছা, এবার মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের স্বার্থে তিনি শামীম ওসমানের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবেন। পাশাপাশি জানালেন, নির্বাচনি প্রচারণার মধ্যে বিএনপি কৌশলগত কারণে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ভোটের দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার সকালে নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তৈমূর আলম খন্দকার।
প্রশ্ন: আপনার নির্বাচনি প্রস্তুতি কেমন?
তৈমূর: আমার প্রচার-প্রচারণা মিছিল দেখেই তো বুঝতে পারছেন, আমার প্রস্তুতি কেমন। আমার প্রচারণায় প্রচুর মানুষের সমাগম হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জবাসী আমাকে সমর্থনও করছে। আমার জয় নিশ্চিত। নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের পছন্দের প্রার্থী পেয়ে গেছে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি কেন মনে করছেন জয় আপনারই হবে?
তৈমূর: নারায়ণগঞ্জ হয়ে গেছে আলাল-দুলালের শহর। আলাল একদিকে গেলে দুলাল উল্টাপথে চলে। এমপি যদি একদিকে যায়, উল্টা দিকে যায় মেয়র। একই দলের হয়েও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। জনসেবায় কোনো পারসোনাল ইগোর জায়গা নেই, কিন্তু তাদের পারসোনাল ইগোর কারণে নারায়ণগঞ্জবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১৮ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে এই অবস্থা চলছে। মানুষ এখন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়। সেই সঙ্গে সারা জীবন আমি জনগণের জন্য কাজ করে এসেছি, আমি জনগণের নেতা, মানুষ এখন আমাকে চায়।
প্রশ্ন: মেয়র ও সংসদ সদস্য একই দলের হওয়ার পরও বলছেন তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আপনি মেয়র হলে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে পারবেন?
তৈমূর: আমি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই, কতটুকু পারব জানি না। আমি গণমানুষের জন্য যার সঙ্গে বসা দরকার, তার সঙ্গেই আলোচনায় বসব। আমার এত ইগো প্রবলেম নাই।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী দাবি করেছেন, আপনি আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যের ওপর ভর করে নির্বাচন করছেন, এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
তৈমূর: আমি গডফাদারের লোক কি না, তা নারায়ণগঞ্জবাসী ভালো করে জানেন। এ কথা বলে আইভী আমাকে ছোট করতে গিয়ে উল্টো আমার একটি উপকার করে দিয়েছে। কারণ মানুষ এখন বুঝবে আওয়ামী লীগে বিরোধ কতটা প্রকট। বিএনপিতে এসব নেই, আমরা সব সময় ইউনাইটেড আছি। এমন দলকে মানুষ কেন ভোট দেবে। শামীম ওসমানের সাহায্য নিয়ে আমার নির্বাচন কেন করা লাগবে। তার সঙ্গে আমার অনেক গণ্ডগোল হয়েছে। সে আমাকে মামলার আসামি করেছে, নানা সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার ওপর হামলা করেছে। আমার জয়লাভ করার জন্য আমার জনপ্রিয়তাই যথেষ্ট, আমি জনগণের রাজনীতি করি।
প্রশ্ন: নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
তৈমূর: আমি মনে করি, এবার ভোটকেন্দ্রে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে এবং মানুষ ভোট দেবে। তবে প্রশাসন কিছুটা ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করছে। আজকেও আমার বাড়ির সামনে ১৫ জন পুলিশ ছিল। পুলিশ যদি এমন করে তাহলে কর্মীরা আমার বাসায় আসতে পারছে না। আমার একাধিক কর্মী আটক হয়েছে। বিএনপির সব নেতা-কর্মীর নামেই মামলা আছে। এত দিন ধরে নাই, এখন ধরছে। এর কারণ তো স্পষ্ট। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় নিবেদন করছি, নির্বাচনটা যেন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই, তখন মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। তা ছাড়া ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো চেষ্টা হলে তা রুখে দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। এরপরও যদি সুষ্ঠু ভোট না হয় তখন সরকার বুঝবে আন্দোলন কাকে বলে।
প্রশ্ন: দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আপনি নির্বাচনে অংশ নিলেন, আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে, তাহলে কি দলের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক এখানেই শেষ?
তৈমূর: দল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল। দলের সম্মতির বাইরে আমি নির্বাচনে আসিনি। দলের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আছেন। তারা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। দল দুই টুকরা হলেও আমার সঙ্গে সম্পর্ক সব সময় একই থাকবে, এটা কখনও নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন: মেয়র হলে প্রথমে কোন কাজটি করতে চান?
তৈমূর: সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট হয়েছে, যারা আবার মেয়র আইভীর নির্বাচনি প্রচারণার কাজ করছে। আমি প্রথমে ওই সিন্ডিকেট ভেঙে দেব, আর চাঁদাবাজি দূর করব। আর হকারদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব। যেটা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মেয়র।