রোহিঙ্গা শুধু ঝামেলাই নয়, আতঙ্কও
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
লাখো রোহিঙ্গাকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাই বলে তারা এখানে বছরের পর বছর থেকে যাবে, তা হতে পারে না। রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে শুধু ঝামেলাই নয়, আতঙ্কেরও নাম। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে এ দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এ মন্তব্য করেন কক্সবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠনের নেতারা। এছাড়া তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গভীর শঙ্কাও প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গা শিবির সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতে, দিন যতই যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে তত বেশি অস্থিরতা ও নানা অপরাধ বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে হত্যা, গুম, মাদক চোরাচালান ও অপহরণসহ নানা অপরাধ। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের হাতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের ক্রমাগত মিথ্যাচারের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের ঝুঁকি বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। সব সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সংগঠক ও ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী বলেন, চার বছরের অধিক সময় পার হয়ে যাচ্ছে তবুও, একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। যে হারে রোহিঙ্গারা দিনের পর দিন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে, এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সমস্যাটি শুধু বাংলাদেশের নয়। বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
নারী সংগঠক ও কক্সাবাজার পৌরসভার কাউন্সিল শাহেনা আক্তার পাখী, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম হামিদা তাহের, টেকনাফ পৌর কাউন্সিলর কোহিনুর আক্তার বলেন, আমরা প্রতিদিন অধীর আগ্রহে থাকি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেখার জন্য। কিন্তু সেই মাহেদ্রক্ষণ যেন কোনোভাবে ধরা দিচ্ছে না। আর যেদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেটাই হবে কক্সবাজারবাসীর জন্য সবচেয়ে সুখবর।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করবে, তা কিন্তু আমরাও চাই না। বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়, বাড়িও নয়। সারাজীবন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে থাকতে চাই না। আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই। আমাদের শুধু একটি দাবি, মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি।
পাকিস্তান আমলে, ১৯৭০ সাল থেকে কিছু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে এসে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। রোহিঙ্গাদের ভাষা আর চট্টগ্রামবাসীর ভাষা প্রায় এক হওয়ায় তারা সহজেই স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় চার দশকে বাংলাদেশে চার ধাপে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা আসে।
এই চার দফায় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ঐ ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সামান্য অংশ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় আট হাজার একর বনভূমিতে নির্মিত নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে মোট ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে এখন এক লাখ ৯২ হাজার ৯১৩টি পরিবারের মোট আট লাখ ৯৮ হাজার ৭০৪ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কক্সবাজারে আশ্রিত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করেছে সরকার।
ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরগুলো সম্পূর্ণ সরকার পরিচালনা করছে। সেখানে রোহিঙ্গা কার্যক্রমে ইউএনএইচসিআরসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলো সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ১৭ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভাসানচরে বসবাস করছে।