‘গায়েবি’ কারণে বদলে যায় আ’লীগের তৃণমূলের প্রার্থী!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের আগে তৃণমূলে হয় ভোটাভোটি। গোপন ব্যালটে তৃণমূলের নেতারা ঠিক করেন তাদের পছন্দের প্রার্থী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শুরু থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে সিলেটে এভাবেই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করছেন।
কিন্তু তৃণমূলের পছন্দের এই প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর পর ‘গায়েবি’ কারণে বদলে যায় প্রার্থী। তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া হয় অন্য প্রার্থী। আর কেন্দ্রের পছন্দের প্রার্থীরা মাঠে নেমে হয়ে পড়েন অসহায়। রাগ, ক্ষোভ আর অভিমানে দলীয় প্রার্থীর কাছ থেকে দূরে সরে যান মাঠের নেতাকর্মীরা। ফলে নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটছে নৌকা প্রতীকের।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত সিলেটে প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রের এমন নাটকিয়তার খেসরাত দিয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগ। পঞ্চম ধাপের ১৮টি ইউনিয়নের নির্বাচনেও ঘটেছে পুণরাবৃত্তি। দুই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৬টিতে বিজয়ী হয়েছে নৌকা। বাকিগুলোতে ঘটেছে ভরাডুবি। দলীয় প্রতীকের এই ভরাডুবির অন্যতম কারণ তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী বদল এবং অভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্বকে দায়ি করছেন নেতাকর্মীরা। তবে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী বদল করে জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলছেন না। এর প্রভাব পড়ছে নির্বাচনের ফলাফলে।
পঞ্চম ধাপে সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে জকিগঞ্জে ১টি ও কানাইঘাটের ৪টি ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী প্রার্থীদের বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে নতুন প্রার্থী চাপিয়ে দেয়া হয়। এই ৫ ইউনিয়নের মধ্যে কেবলমাত্র জকিগঞ্জের বারঠাকুরী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহসিন মর্তুজা চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। তিনি এর আগেরবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তৃণমূলের ভোটে এই ইউনিয়নে মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিভাকর দেশমূখ্য। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর চৌধুরী কোহিনূরের পরিবর্তে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, হত্যা মামলার আসামী বিলাল আহমদ, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়ার পরিবর্তে জেমস লিও ফারগুসন নানকা, দিঘীরপাড় ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিতের পরিবর্তে আলী হোসেন কাজল এবং ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হারুন রশিদের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম আহমদকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে এই চার প্রার্থীর সবার চরম ভরাডুবি হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেননি। এর আগের ধাপের নির্বাচনগুলোতেও কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করা হয় তৃণমূলের প্রার্থী। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে আসা প্রার্থীরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি ভোটের মাঠে। কয়েকটি ইউনিয়নে মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় তুলেছেন ঘরে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করে তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হয়। তালিকা কেন্দ্রে যাওয়ার পর তৃণমূলের ভোটে হেরে যাওয়া প্রার্থীরা নানাভাবে তদবির করে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। কোন কোন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী তদবির করেন। ফলে মনোনয়নের জন্য বর্ধিত সভা করে ভোটাভোটিকে কেন্দ্রের একটি তামাশা হিসেবেই মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।
প্রার্থী পরিবর্তন প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় বর্ধিত সভা করে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ ভোটে আমরা প্রার্থী বাছাই করি। তৃণমূলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় মতামত দিয়ে আমরা কেন্দ্রে তালিকা পাঠাই। এরপর কেন্দ্র থেকে অনেক সময় প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে পরিবর্তন করা হয়। অনেক সময় তৃণমূলের ভোট কম পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যানদের কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শুধু দলীয় প্রতীক বিবেচ্য হয় না। এলাকা ও গোষ্ঠীগত প্রভাবও নির্বাচনে কাজ করে।’সুত্র-সিলেটভিউ