সিলেটে কাজ না করেই ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গেল ঠিকাদার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর নৌঘাটে জেটি নির্মাণ না করেই ৫০ লাখ টাকা বিল তোলার অভিযোগ উঠেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কতিপয় প্রকৌশলীর যোগসাজশে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, গত বছর জুলাই মাসে সালুটিকর নৌঘাটে একটি জেটি নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ ৩৯ হাজার ১৮৫ টাকার কাজ পায় ঢাকার মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ অনুযায়ী, নৌঘাটে আগে থেকেই স্থাপিত পন্টুনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ৮০ ফুট লম্বা স্টিলের জেটি নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র ৫০ ফুটের একটি স্টিল অবকাঠামো নির্মাণ করে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া জেটি থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত ৯০ ফুট দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ সড়ক আরসিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করার কথা ছিল। এই অ্যাপ্রোচ সড়কটি নির্মাণ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি টানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে নৌ-জেটি কোনো কাজেই লাগছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫০ ফুট দীর্ঘ জেটি মূল সড়ক থেকে অনেক দূরে। যে কারণে অ্যাপ্রোচ সড়ক ছাড়া এই জেটি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে কার্যাদেশে থাকা তিনটি কাজের অন্যতম জেটির দুই ধারে ৮০ ফুট দীর্ঘ নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক কার্পেটিং ও গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা। বাস্তবে এর কোনো কাজই করা হয়নি। অথচ কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে দাবি করে ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে তদন্তের জন্য কারিগরি টিম পাঠায় বিআইডব্লিউটিএ।
তদন্ত দলের সদস্য সুমন চন্দ্র সরকার জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র কতিপয় অসাধু প্রকৌশলীর সহায়তায় এ দুর্নীতি হয়েছে। এ প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী রবিউল ও মহসিন। তারা শতভাগ কাজ সম্পন্নের প্রতিবেদন দেন কর্তৃপক্ষের কাছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ২৮ জুন বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সব বিল পরিশোধের আদেশ জারি করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমুদয় বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল বলেন, বন্যার অজুহাতে সে সময় কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। ঠিকাদার সে সময় বলেছিলেন, শুকনো মৌসুমে বাকি কাজ সম্পন্ন করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর আগেই কাজ শেষের ভুয়া প্রতিবেদন জমা দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।
আরো পড়ুন: আপেলের পাঁচ ব্যাংক কার্ডে ‘৫ কোটি’ টাকা, খরচ ‘গার্লফ্রেন্ডদের’ পেছনে
স্থানীয়রা জানায়, নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য গার্ডওয়াল নির্মাণ না করায় পুরো প্রকল্পই এখন ঝুঁকির মুখে। যেকোনো সময় ভূমিধসে স্টিলের জেটি ও পল্টুন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
জানতে চাইলে প্রকৌশলী রবিউল, মহসিন ও জহিরুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, সালুটিকর নৌঘাটের মাধ্যমে জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ থেকে উত্তোলিত বালু-পাথরের সিংহভাগ সারাদেশে পাঠানো হয়।