আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতার ৩ বছর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ৩:০৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বেশকিছু সফলতা এবং প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আরও একটি বছর পার করলো আওয়ামী লীগ সরকার। বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়াল আক্রমণ মোকাবিলার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে সরকারকে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার তিন বছর পার করে চতুর্থ বছরে পা দিল। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে। এই সরকারকে গত এক বছর প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বেশকিছু প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করতে হয়। এ বছরই স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আসে।
এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করে। কোভিডের ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকার সফলতার দাবি রাখে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সরকারের তৃতীয় বছর ছিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছর। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। সেই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপিত হয়।
এর আগের বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। সরকারের তৃতীয় বছরে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এক সঙ্গে উদযাপন করা হয়। স্বাধীনতার মাস মার্চে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারিসহ সার্কভুক্ত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অংশ নেন।
এছাড়া ভিডিও বার্তা ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা শুভেচ্ছা জানান। এর পর ১৬ ডিস্বের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরাও শুভেচ্ছা জানান।
এ বিষয়গুলো সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় ধাক্কা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও গত বছর করোনাভাইরাসের (চলমান) সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। দ্বিতীয় ঢেউ ছিল আগের বছরের প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ও ব্যাপক প্রাণঘাতী। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে কয়েক গুণ শক্তি ও গতি নিয়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে।
দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম, জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির ওপর এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ে। মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি জীবিকা সচল রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা, কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিয়ে এবং তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকারকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে করোনার ঊর্ধ্বগতির মুখে ভ্যাকসিন সংকট ছিল একটা আতঙ্কের কারণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক তৎপরতায় ভ্যাকসিন সংকট থেকে উত্তরণ সরকারের বড় সফলতা। হেফাজতের সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক হামলা মোকাবিলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলাকালে হেফাজতে ইসলাম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব ও সহিংসতা চালায়।
মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আসার বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, থানা, রেল যোগাযোগ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ও স্থাপনায় আক্রমণ, ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও সুবর্ণজয়ন্তীর দিনেই এই ঘটনা ঘটানো হয় এবং পরবর্তীতে আরও দুই-তিন দিন বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতাকর্মীদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ঘটনা চলতে থাকে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার একটি বড় ঘটনা ছিল এটি।
এই সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও প্রশাসনকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। এ ঘটনাকে সরকার ও স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ঘটনা বলে অভিযোগ করে।
এর কয়েক মাস পর গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা মোকাবিলা করতে হয় সরকারকে। দুর্গাপূজা চলাকালে গত ১৩ অক্টোবরে কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির, পূজামণ্ডপ, বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়। কুমিল্লা থেকে এই হামলার ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে থাকে।
সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ শ্রেণি-পেশার অসম্প্রদায়িক মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার ওপর আঘাতের বিরুদ্ধে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি গত বছর ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম সভায় এক প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশে পর পর দুটি দ্বিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে সেই দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সেই শর্ত পূরণ হওয়ায় ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএনসিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত করার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়।
দেশের এ অর্জন সরকারের জন্য একটা বড় সাফল্য। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর স্থাপন সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্প গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এ বছর মাইলফলক অগ্রগতি সাধিত হয়।
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হয়, যেটা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাট বলে বিবেচিত। রাশিয়ার প্রযুক্তি, আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের রিয়্যাক্টর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্যের বাধ্যতামূলক পদত্যাগ আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের মতো তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বছর মন্ত্রিসভা থেকে বাধ্যতামূলক পদত্যাগের ঘটনা ঘটে।
বছরের শেষ পর্যায়ে এসে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এর আগে সরকারের প্রথম মেয়াদে যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং দ্বিতীয় মেয়াদে পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করেন।
নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের কারণে ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি নির্দেশ দেন। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। মুরাদ হাসানের এই ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত বিষয়।