সিলেটে ইউপিতে যে কারণে নৌকার পরাজয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ দলীয়। দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই পৌর মেয়রও একই দলের। এরপরও তৃণমূলে সুবিধা করতে পারেনি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বেশিরভাগ ইউনিয়নেই পরাজয় হয়েছে নৌকার প্রার্থীদের। কানাইঘাটে বলতে গেলে ভরাডুবিই ঘটেছে। এর কারণ কী- এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে এলাকায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, যোগ্য প্রার্থী না থাকা, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে কাজ না করা এবং সর্বোপরি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে না পারার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। গত বুধবার জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ করা হয়।
এরমধ্যে জকিগঞ্জের দুটি ইউনিয়নে ভোট জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ১৬টি ইউনিয়নের ফলাফলে দেখা গেছে- ৬টি ইউনিয়নে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি ১০টিতেই হেরেছেন তারা। এই ১০টির মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ২টিতে, জামায়াত ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩টিতে, জমিয়ত প্রার্থী ২টিতে, বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ২টিতে ও জাতীয় পার্টি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ১টিতে জয়লাভ করেছেন। ভোটের হিসাবে বেশি বিপর্যয় ঘটেছে কানাইঘাটে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, কানাইঘাট উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগ বহু ভাগে বিভক্ত। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগে থেকেই। এই দ্বন্দ্বের রেশ ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ কারণে এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে যে ফাটল ধরেছে সেটি নির্ণয় করে তারা দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করবেন। জকিগঞ্জে স্থগিত হওয়া কাজলসার ইউনিয়নের সবক’টিতে ও সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। সুলতানপুর ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টির ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা হাসান আহমদ। বাকি ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একটিতে জামায়াত ও একটিতে জাতীয় পার্টির নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- বারহালে জামায়াতের মোস্তাক আহমদ, বীরশ্রীতে আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার, খলছড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল হক, কসকনকপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আলতাফ হোসেন লস্কর, মানিকপুরে আওয়ামী লীগের আবু জাফর মো. রায়হান, বারঠাকুরীতে আওয়ামী লীগের মহসিন মুর্তজা চৌধুরী টিপু ও জকিগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের মাওলানা আফতাব আহমদ। অপরদিকে, কানাইঘাটের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে আওয়ামী লীগ, ১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ২টিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ২টিতে জামায়াত, ২টিতে বিএনপি’র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ উপজেলায় বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তমিজ উদ্দিন, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে জমিয়তের মাওলানা জামাল উদ্দিন, দীঘিরপাড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুল মোমিন চৌধুরী, সাতবাঁকে জামায়াতের আবু তায়্যিব শামীম, বড়চতুলে বিএনপির আবদুল মালিক চৌধুরী, কানাইঘাট সদরে আওয়ামী লীগের আফসার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, দক্ষিণ বাণীগ্রামে জামায়াতের মাস্টার লোকমান আহমদ, ঝিঙ্গাবাড়িতে বিএনপির মাস্টার আবু বকর ও রাজাগঞ্জে জমিয়তের মাওলানা শামসুল ইসলাম। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জকিগঞ্জে যে দুটি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা হয়নি সে দুটি ইউনিয়নের মধ্যে কাজলসারের ঘটনা অবাক করেছে সবাইকে। কাজলসারে ভোট জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। ভোট জালিয়াতির ঘটনায় তারা দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।