মাধবপুরে নৌকার ভরাডুবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৬:১৮,অপরাহ্ন ০৬ জানুয়ারি ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাধবপুর উপজেলায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে নৌকার বিজয় হয়েছে। বাকি ৯টির মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ৫টিতে বিএনপি ও ১টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে।
মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ইউপি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুকোমল রায় বলেন, নৌকার প্রার্থী নির্বাচন সঠিক ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ প্রার্থী নির্বাচনে আর্থিক সংকটে পড়ে। কালো টাকার প্রভাব, এছাড়া বিদ্রোহীর কারণে ফলাফলের বিপর্যয় হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর বিদ্রোহীদের দাপটে নৌকার অধিকাংশ প্রার্থী বেকায়দায় পড়ে।
১নং ধর্মঘর ইউনিয়নে বিদ্রোহী মো. ফারুক আহম্মদ পারুল আনারস প্রতীক নিয়ে ৭ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী সামছুল ইসলাম কামাল ঘোড়া প্রতীকে ৫ হাজার ৫১০ ভোট পান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজবাহুল বর পলাশ নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ১৮৬ ভোট পান। ২নং চৌমুহনী ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মাহবুবুর রহমান সোহাগ ঘোড়া প্রতীক ৮ হাজার ৯১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আপন মিয়া পেয়েছেন ৮ হাজার ৮১৭টি ভোট।
এছাড়া ৩নং বহরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আলাউদ্দিন নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৬৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী এতেশাম উল বর চৌধুরী আনারস প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়েছেন, ৪নং আদাঐর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মীর খুর্শেদ আলম চশমা ২ হাজার ৮৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. তাজুল ইসলাম অটোরিক্সা ২ হাজার ৭২৯ ভোট পান। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ফারুক পাঠান ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৪৯৪টি। ৫নং আন্দিউড়া ইউপি নির্বাচনে এই প্রথমবারের মত ইভিএম এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ২১৯ ভেটে নির্বাচিত হন, নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী নেপাল চন্দ্র দাস অটোরিক্সা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪। চা-বাগান অধ্যুষিত আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত ৬নং শাহাজাহানপুর ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী পারভেজ হোসেন চৌধুরী চশমা প্রতীকে ১১ হাজার ৩১০ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে বাবুল হোসেন খান ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৮টি।
৭নং জগদীশপুর ইউনিয়নে মো. মাসুদ খান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী অটোরিক্সা প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৩২৬ ভোটে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবির ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৬১৮টি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে সৈয়দ ইমরুল হোসাইন পেয়েছেন ২ হাজার ৬৩৮ ভোট।
৮নং বুল্লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জয়ী মো. মিজানুর রহমান আনারস প্রতীক ৩ হাজার ৭২৫ ভোট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সামছুল ইসলাম মামুম চশমা প্রতীক পান ৩ হাজার ৬৬৯ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. শামীমুর রহমান ভোট পান ১ হাজার ৭৫টি।
৯নং নোয়াপাড়া ইউনিয়নে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম আতাউল মোস্তফা সোহেল আনারস প্রতীকে ৮ হাজার ৮২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তার চাচা বিএনপির প্রার্থী ঘোড়া ৫ হাজার ২৫৪ ভোট পান। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মোজাহিদ বিন ইসলাম নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ২৫৪টি। ১০নং ছাতিয়াইন ইউনিয়ন বিএনপির প্রার্থী মো. মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ ঘোড়া ৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শহিদ উদ্দিন আহমেদ আনারস প্রতীকে ৩ হাজার ৫৮০ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা রীনা পান ২ হাজার ৯০৩ ভোট।
১১নং বাঘাসুরা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহম্মদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৮৪৫ ভোটে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মিজবা উদ্দিন তালুকদার সোয়েব ভোট পান ৪ হাজার ৪৩৬টি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. এখলাছ মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পান ১ হাজার ৮৬৯টি।
ইউপি নির্বাচনে মাধবপুর উপজেলার ফলাফল সম্পর্কে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রীধাম দাশগুপ্ত বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের অভাব, আন্তঃকলহ, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী, কালো টাকার প্রভাব ও দলীয় পদ বাঁচানোর জন্য উপরে উপরে নৌকার প্রার্থী ও ভেতরে অন্য বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার কারণে এমন ফলাফল হয়েছে।