সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে মোটরসাইকেল ছিনতাই : মিলছে লাশ, টার্গেট নির্জনস্থান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট-মৌলভীবাজার সড়কে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী চক্র তৎপর। মোগলাবাজার থানাধীন হাজীগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত ওই চক্রটি মোটরবাইক ছিনতাইয়ের স্পট হিসেবে ব্যবহার করছে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার হাজীগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কটালপুরের শেষ সীমানার নির্জন স্থানগুলো তাদের টার্গেট। গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ওই এলাকায় মোটরসাইকেল রাইডার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো অনেকে আতঙ্কে আছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমার হাজীগঞ্জ বাজার থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার যেন অপরাধীদের ‘সেফ জোন’। জনমানবশূন্য এই সড়কে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে।
গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মহিদপুর গ্রামে সিলেট-মৌলভীবাজার সড়কের পাশে নির্জন এলাকার একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পায়নি পুলিশ। অনেকে ধারণা করছেন, অজ্ঞাত উদ্ধারকৃত লাশ হয়তো কোনো মোটরসাইকেল রাইডারের। আনুমানিক ৩০-৩৫ বছর বয়সের লাশটির পরনে ছিল লাল ও কালো রঙের জ্যাকেট এবং একটি কালো রঙের প্যান্ট।
গত বছরের ৯ এপ্রিল সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের মোগলাবাজার এলাকার গফুরের বাঁধ এলাকার যাত্রী ছাউনির ভেতরে মোটরসাইকেল রাইডার রাজুকে মৃত ভেবে ফেলে গিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। রাজুর স্বজনরা জানিয়েছিলেন, গত ৮ এপ্রিল মোটরবাইক নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি রাজু। পরদিন সকাল পৌনে ৮টার দিকে মোগলাবাজার থানার গফুররগাঁও এলাকার একটি যাত্রী ছাউনি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
গত ১১ মে হুমায়ুন রশিদ চত্বর থেকে মোটর বাইকার রেদোয়ান রশিদ চৌধুরীকেও ওই যাত্রী ছাউনির সামনে নিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে ছাউনির পেছনে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে লাশ কচুরিপনাযুক্ত কাঁদাপানির ডোবায় ফেলে বাইক নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়ে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানার হাজীগঞ্জ মুহাম্মদপুর এলাকার একটি ডোবা থেকে ঈদের আগের দিন উবারচালক রেদওয়ান রশীদ চৌধুরী সৌরভের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
একই এলাকায় পরপর দুটি ঘটনায় টনক নড়ে মোগলাবাজার থানা পুলিশের। নানা প্রযুক্তি ও সোর্স মারফত বছরের মে মাসে সিলেট নগরীর কদমতলী এলাকা থেকে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সদস্য মজিবুর রহমানকে আটক করে। সে এক হোটেলের কর্মচারী। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে মোটরবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেয়। তার দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এনাম আহমদ নামের একজনকেও গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ একে একে জুয়েলুর রহমান ও শামসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ছিনতাইচক্রের সদস্য এনাম আহমদ নগরীর হুমায়ুন রশিদ চত্বর হতে মোটর বাইকার গোলাম কিবরিয়া রাজুকে মোটরসাইকেল ভাড়ায় নিয়ে মোগলাবাজারের মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনির সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে তাকে যাত্রীছাউনির পেছনে নিয়ে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে মারা গেছে ভেবে ডোবায় ফেলে রেখে মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়। রাইডারদের টার্গেট করে গড়ে উঠেছিলো তাদের একটি ছিনতাই সিন্ডিকেট। তারা শহর থেকে রাইডারদের ভাড়ায় নিয়ে যেতো শহরতলীর নির্জন স্থানে। সেখানে খুন করে নিয়ে যায় মোটরসাইকেল।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার জাহিদ বলেন, গত সপ্তাহে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মুহিদপুর গ্রামের একটি ডোবা থেকে উদ্ধারকৃত লাশটির এখনো পর্যন্ত কোনো ওয়ারিশের খোঁজ না পাওয়ায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।