সিলেটে শেষতক রাজনীতিরই জয়, নতুন বার্তায় শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
মৃত্যুর মিছিল দিয়ে শুরু হওয়া বছরের শেষদিকে এসে হয়েছে রাজনীতির জয়। ২০২১ সালের শেষলগ্নে রাজনীতিতে মুখর হয়েছে সিলেট। টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে সিলেটকেই বেছে নিয়েছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগেও টার্ন নেয়া রাজনীতি দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ফলে রাজনীতিতে নতুন বার্তা নিয়েই শুরু হচ্ছে সিলেটের নতুন বছর। গেল বছর করোনার যাঁতাকলের মধ্যদিয়েই শুরু হয়েছিল জীবনযাত্রা। চারিদিকে ছিল হতাশার ছাপ। মানুষ মৃত্যুর মিছিলও ছিল।
হাসপাতালে ঠাঁই হয়নি করোনা আক্রান্ত রোগীর। সবখানেই ছিল হা-হুতাশ। তবে-গণটিকায় এসেছে স্বস্তি। কমেছে করোনার প্রভাব। লকডাউনও খুলে যায়। এরপর থেকে সিলেটের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দীর্ঘ লকডাউনের যাঁতাকালে থাকা সিলেটের মানুষও জীবিকায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। দেশে আসা শুরু করেন প্রবাসীরাও। বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট ভূমিকম্পের আতঙ্কের মধ্যদিয়েই কেটেছে। কয়েক দফা ভূমিকম্প সিলেটবাসীকে উৎকণ্ঠিত করে তোলে। স্থানীয়ভাবে উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্পের কারণে অনেকেরই মনে নানা আশঙ্কা দানা বাঁধে। তবে পরবর্তীতে এই আশঙ্কা কেটে গেছে। হতাশার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া বছর রাজনীতিতে শেষতক এসে রাজনীতিময় হয়ে ওঠে। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ নেতারা সরব হয়ে ওঠেন। এখনো চলছে নির্বাচনের হাওয়া। সিলেটের নেতারা ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত। ছুটে যাচ্ছেন ইউনিয়নে ইউনিয়নে।
তবে- জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। না জানিয়ে কমিটি দেয়ার কারণে ছাত্রলীগের কমিটিকে প্রথমে গ্রহণ করেনি সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও সেখানে ব্যর্থ হন। ফলে সিলেটে বঞ্চিতদের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের হস্তক্ষেপে সিলেটের ঘোষিত ছাত্রলীগকে গ্রহণ করেছে সিলেট আওয়ামী লীগ। বঞ্চিত ছাত্রলীগের কর্মীরা এখনো মনেপ্রাণে কমিটিকে গ্রহণ করে নিতে পারেননি। সবশেষ বুধবার সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নাগরিক সংবর্ধনাকে ঘিরে সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। সিটি মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর দেয়া সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগ না গেলেও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এতে যোগ দেন। আর এ নিয়ে নাটকীয়তা চলছে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। আর দু’দিকেই সফল হয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে তিনিও দিয়েছেন বড় ধরনের ঝাঁকুনি।
সিলেট নগরে বর্তমানে পানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে কিছুটা জর্জরিত থাকলেও রাজনীতির মাঠে তিনি চমকের পর চমক দেখিয়েছেন। তাকে ঘিরেও সরব ছিল রাজনীতির ময়দান। বছরের শেষ দিকে এসে কেন্দ্রীয় বিএনপির তরফ থেকে মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন আলোচিত বিএনপি নেতা এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তাকে না জানিয়ে কমিটি গঠন করার কারণে তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেন। আর তার সঙ্গে সিলেটে গণপদত্যাগের হিড়িক পড়ে। এখন জামান সিলেটের সামাজিক আন্দোলন নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আর বিএনপিতে এসেছে পরিবর্তনের হাওয়া। দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নেতৃত্বে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে। এতে সুফল পাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আগের চেয়ে রাজনীতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভয় কেটে গেছে সিলেট বিএনপির। এতে বিএনপির পরপর দুটি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করেছে। বিশেষ করে ৩০শে নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সিলেটের বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজনে কর্তৃত্ব নিয়েছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। ওই সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এসে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৮ই ডিসেম্বর সিলেট মুক্ত দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন সিলেটের বিবদমান দুই নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। দীর্ঘদিন তাদের দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আড়ালে থাকলেও গেল বছরের শেষদিকে তাদের মুখোমুখি অবস্থান প্রকাশ্যে এসেছে। আর এই দ্বন্দ্ব আগামীতে আরও প্রকট হতে পারে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
তবে- আশার কথা হলো করোনার পর গত বছরের শেষদিকে এসে সিলেটের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নতুন ফরম্যাটের জয়জয়কার চলছে। গেল বছরে সিলেটবাসী হারিয়েছে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে। তার স্থলে নতুন এমপি পেয়েছেন ওই আসনের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে ভোটের মাঠে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ভোটে জয়ী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, সিলেটের উন্নয়ন প্রশ্নে এক হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বছরের শেষদিকে এসে তারা দু’জন উন্নয়নের স্বার্থে এক থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে উন্নয়নের প্রশ্নে নির্ভার হয়েছেন সিলেটের মানুষ।