থমথমে গোলাপগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে টানা তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেটের গোলাপগঞ্জের বৈটিকর এলাকা। এ সময় শত শত রাউন্ড গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে ১০টির মতো যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এতে গুলিতে বৈটিকর বাজারের মোটর মেকানিক আব্দুস সালাম নিহত হয়েছেন। রাত ৮টায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ তিন ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে এ ঘটনায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বৈটিকরে। পুলিশ দাবি করেছে; ক্ষুব্ধ প্রার্থীর সমর্থকদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন আব্দুস সালাম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন নির্বাচন কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে সিলেটে।
চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ ও ফলাফল শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছিলো। কিন্তু সিলেটের গোলাপগঞ্জের বৈটিকরে এসে উত্তাপ ছড়ালো ইউনিয়ন নির্বাচন। এটি হচ্ছে গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়ন। সিলেট শহরের কাছাকাছি ওই এলাকা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোববার গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল চারটায় শুরু হয় ভোট গণনা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা শুরু করা হয়। রাত ৮টার দিকে নিশ্চিত হয়ে যায় ফুলবাড়ি ইউনিয়ন নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন নৌকার প্রার্থী। এমন সময় ইউনিয়নে ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রের ফলাফলকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত নেতা এমরান হোসেনের লোকজন বৈটিকর বাজারে এসে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের আগে তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। কয়েকটি স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। এ খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পৌঁছে ঘটনাস্থলে। তারা এসে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেও অবরোধকারীরা পুলিশের নির্দেশ মানেনি। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগানের গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন বৈটিকর গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য ঘোষণা দেয়। ফলে অবরোধস্থলে শত শত মানুষ এগিয়ে আসে। পুলিশের পক্ষ থেকেও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফের শুরু হয় সংঘর্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় বৈটিকর বাজারে অবস্থান করছিলেন আব্দুস সালাম। তার বাড়ি গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের রামপা গ্রামে। সংঘর্ষের সময় তিনি নিজ দোকানের সামনেই ছিলেন। এমন সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। মধ্যরাতের দিকে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবদুস সালাম বৈটিকর বাজারের একটি সাইকেল-রিকশার গ্যারেজে মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২৬৭ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে বলে জানিয়েছেন গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী।
গতকাল তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন জামায়াত নেতা এমরান হোসেন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পরই তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এসময় জামায়াতের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে মেকানিক আব্দুস সালাম গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। নিহত আব্দুস সালামের ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে বৈটিকর সহ আশপাশের গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।