স্বর্ণের রুট ওসমানী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম রুটে পরিণত হয়েছে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দুবাই কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট এলেই নজরদারি বেড়ে যায়। যাত্রীদের ওপর কড়া নজর রাখেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এর ফলও মিলছে। গতকাল এক চালানেই ধরা পড়লো ১১ কেজি স্বর্ণ। আর এই স্বর্ণগুলো এখন বিশেষ কায়দায় নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। কখনো তরল করে আবার কখনো জুসার কিংবা
আয়রন মেশিনের ভেতরে বিশেষ কায়দায় প্যাকেজিং করে নিয়ে আসছে। এই বিশেষ পদ্ধতি রপ্ত করতে সময় লেগেছে গোয়েন্দাদেরও।
আবার কখনো কখনো বিমানের ফ্লাইটেই রেখে আসা হয় স্বর্ণের চালান। ক্লিনারদের দিয়ে বাইরে নেয়ার আগে ধরা পড়ে এই স্বর্ণের চালান। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের ধারণা; ওসমানীকে ঘিরে দেশের স্বর্ণ চোরাকারবারিরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট ভাড়াটেদের দিয়ে বহন করে নিয়ে আসছে এসব চালান। ফলে চালান ধরা পড়লেও সিন্ডিকেটের সদস্যরা সব সময়ই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন; গতকাল সকাল ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৪৮ ফ্লাইটটি দুবাই থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করে। ফ্লাইটে স্বর্ণের চালান আসতে পারে বলে ধারণা করেন ওই সময় দায়িত্বরত কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ কারণে ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের উপর কড়া নজরদারি করা হয়। এমন সময় দুবাই থেকে আসা ৪ যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ১১ কেজি ২২০ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়। এসব স্বর্ণের চালান গলিয়ে জুসার মেশিন ও আয়রনের ভেতরে করে বিশেষ কায়দায় নিয়ে আসা হচ্ছিল। স্বর্ণের চালান উদ্ধারের পর ৪ যাত্রীকে স্বর্ণের মালিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের লাগেজে করেই এসব চালান আসছিল। ওই চালানের মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ওই ৪ যাত্রীকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দারা। এরা হচ্ছে- হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের শেখ মো. জাহিদ, কানাইঘাটের কায়স্থগ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে মকবুল আলী, কেউরিয়া হাওরের মনতাজ আলীর ছেলে বশির উদ্দিন ও বাঁশবাড়ি এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে সুলতান মাহমুদ।
ওসমানী বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা উপ-কমিশনার মো. আল-আমিন জানিয়েছেন, আটককৃতরা আয়রন মেশিন ও জুসার মেশিনের নিচে স্বর্ণ ঢালাই করে খুবই দক্ষতার সঙ্গে সিলেটে নিয়ে আসেন। তাদের চলাফেরা সন্দেহ হলে মালামাল তল্লাশি করে স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে, দুবাই ফ্লাইট চালু হওয়ার পর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্রমেই স্বর্ণ চোরাচালানের রুটে পরিণত হয়েছে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব করছে বলে নানা সময় অভিযোগ উঠছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ৮ বছরে ওসমানী বিমানবন্দরে প্রায় আড়াই মণ স্বর্ণ জব্দ করেছে কাস্টমস। এই স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। এই বিমানবন্দরে ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের ২২শে নভেম্বর পর্যন্ত এই স্বর্ণের চালান আটক করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৪০ কেজি স্বর্ণ ওসমানী বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করে। এসব সোনার বাজার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২২শে নভেম্বর অবধি জব্দকৃত স্বর্ণের পরিমাণ ৫৯ দশমিক ১৮ কেজি। এ সময়ে ১৮টি চালানে আসা এসব স্বর্ণ জব্দ করা হয়। যেগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শাহ্ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণের চালান দেশে ঢোকানো হয়। সম্প্রতি ঢাকার শাহ্জালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত বিমানবন্দরে কড়াকড়ির কারণে সিলেটের ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ভেতরে ঢোকা স্বর্ণের চালান সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় পাচারকারীরা।
তবে, স্বর্ণের চালান আটক করা গেলেও মূল সিন্ডিকেট সদস্যরা সব সময়ই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও চোরাচালানিদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না।