হাফসার বিয়ে আর হলো না, নিখোঁজ একই পরিবারের ৩ জন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দগ্ধ বা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক মানুষ। বিভীষিকাময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ একই পরিবারের তিনজন।
শনিবার ছিল বড় মেয়ে হাফসার বিয়ের দিন। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে আগেভাগেই ঢাকা থেকে স্ত্রী পাখি বেগম ও আড়াই বছরের ছোট ছেলে নাসরুল্লাহকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন আবদুল হাকিম। তার বাড়ি বরগুনা সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। কিন্তু হাফসার বিয়ে আর হলো না। তার আগেই অভিযান-১০ ট্র্যাজেডিতে বাবা-মা-ছোট ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শরীফ বাড়িতে আজ বিয়ের আনন্দের বদলে কান্নার রোল পড়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানা গেল হাফসার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার করুণ গল্প। খবর শুনে হাফসার দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর তার বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের লাশ খুঁজতে এসেছেন নানি ফরিদা বেগম, চাচা আবদুল মোতালেব শরীফ ও চাচাত চাচা ছত্তার শরীফ।
কিছুক্ষণ পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ফরিদা বেগম। শনিবার নাতনির বিয়ের দিন ছিলে। সেটা আর হলো না। এখন সেই মরদেহ পাব কি না, সেটাও জানি না।
নানি ফরিদা বেগম বলেন, আমার আর কিছু লাগবে না। কবরটা দেওয়ার ব্যবস্থা একটু করে দেন।
নিখোঁজ আবদুল হাকিম শরীফের বড় ভাই আবদুল মোতালেব শরীফ বলেন, ‘ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে খুব ছোট একটা পদে চাকরি করতেন আবদুল হাকিম। বড় মেয়ে হাফসা আমাদের ওখানে থেকেই লেখাপড়া করতেন। আর ছোট ছেলে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন হাকিম। পরিবারের দেখাশোনায় হাফসার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ছেলে বায়িং হাইজে চাকরি করেন। শনিবার বিয়ের জন্য সব আয়োজন আমরা শেষ করে রেখেছি। হাকিমও বলেছিল, আমরা যেন সব গুছিয়ে রাখি। সে এসে অনুষ্ঠানাদি শেষ করে আবার চলে যাবে। ছুটি পায়নি। কিন্তু চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে হাকিম।’
তিনি বলেন, ‘এখন কেমনে বাঁচবে হাফসা, আর কেমনে থাকব আমরা। বুঝতেছি না। যারা পুড়ে গেছে তাদের দেখেও চেনার উপায় নেই। অন্তত লাশগুলো বুঝে পেলেও মনরে বুঝাতে পারতাম।’