অবশেষে সিলেটের বোঙারী নাজিম গ্রেপ্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
‘বোঙারী’ নাজিম উদ্দিন। এক নামেই তাকে চিনেন সবাই। সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সে। সীমান্তে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে আগে কয়েকবার আলোচিত হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে তার নেতৃত্বেই তামাবিল এলাকায় বিজিবি’র ওপর হামলা চালানো হয়েছিলো। এরপর বিজিবি’র পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। অবশেষে সেই ‘বোঙারী’ নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবিই। তিনদিন আগে রাতের আঁধারে ভারত থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসার সময় বিজিবি জওয়ানরা তাকে আটক করে।
নাজিম উদ্দিন তামাবিল এলাকার গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তার নেতৃত্বে চোরাচালানি চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে তামাবিল, জাফলং ও জৈন্তাপুর এলাকায়। অন্তত ৩০-৩৫ জনের এ সিন্ডিকেটের নেতা বোঙারী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাফলংয়ের সুমন সিন্ডিকেটের সেকেন্ডম্যান হিসেবে নাজিম পরিচিত। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যায় মটরশুঁটি, স্বর্ণ সহ নানা জিনিস। আর বাংলাদেশে আসে মদ, কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, কাপড় সহ নানা পণ্য। প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকা একাই নিয়ন্ত্রণ করে নাজিম উদ্দিন।
স্থানীয় সংগ্রাম ফাঁড়ির বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির নিকটবর্তী এলাকায় মাদকের চালান নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলো নাজিম ও তার সহযোগীরা। এ সময় বিজিবি’র সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে থাকা চোরাকারবারিরা পালিয়ে গেলে নাজিম বিজিবি’র জওয়ানদের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় বিজিবি তার কাছ থেকে ৪০ বোতল ভারতীয় মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। বিজিবি জানায়, গ্রেপ্তারের পর নাজিমকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ জানায়, চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য নাজিম উদ্দিনকে বুধবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে।
বিজিবি জানায়, গত ৩রা নভেম্বর ভোরে নাজিমের নেতৃত্বে চোরাকারবারিরা বিজিবি’র টহল দলের ওপর হামলা চালিয়েছিলো। ওই দিন ভারত থেকে অবৈধ পথে চোরাকারবারিরা ভারতীয় চোরাই মালামাল নিয়ে তামাবিল এলাকায় প্রবেশ করে। গোপন সংবাদ পেয়ে সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি’র ৫ জন সদস্য অভিযান চালিয়ে এক ট্রাক মটরশুঁটি আটক করে। তখন স্থানীয় গ্রামের লোকজন এবং চোরাকারবারিরা বিজিবি’র টহল দলের ওপর হামলা করে ট্রাকসহ আটককৃত মটরশুঁটির ট্রাকটি ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বিজিবি’র ২-৩ জন সদস্য আহত হন। পরে গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা জাহান সরকারের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুতকৃত মটর ডাল জব্দ করে তা ৩ লাখ ৮ হাজার ৪শ’ টাকায় উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি এবং জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে পৃথক মামলায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিজিবি জানায়, এই ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে সংগ্রাম ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে একই পরিবারের তিন সদস্য সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আসামিরা হলো- মো. নাছির উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, মান্না মিয়া, শামসুল মিয়া। স্থানীয়রা জানিয়েছে- তামাবিল ও জাফলং এলাকার চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করে জাফলংয়ের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে চোরাচালানের লাইন বিক্রি করে। ১৫-২০ লাখ টাকায় এই লাইন বিক্রি করা হয়। আর লাইনের মাধ্যমে চোরাচালানের সব মালামাল ভারতে প্রবেশ করে এবং আসেও।