বদ্ধ ঘরে বাবা-মার মরদেহের পাশে কাঁদছিল শিশুটি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ৬:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মধ্যরাতে তিন বছরের নাতির কান্নার শব্দ শোনে ছেলের ঘরের দিকে যান জামাল শেখ। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে দরজা লাগানো দেখেন এবং ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কারও সাড়া পাননি। পরে জানালা ভেঙে দেখেন ঘরের ভেতর ছেলে ও ছেলের বউয়ের মরদেহ। এরপর তার চিৎকার শোনে আশপাশের লোকজন এসে রাত দেড়টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করেন। শনিবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া আবাসন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। উদ্ধার হওয়া দম্পতি হলেন জামাল শেখের ছেলে সুমন শেখ (২৫) ও তার স্ত্রী সোনিয়া খাতুন (২০)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে তারা আত্মহত্যা করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিন দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ফেরেন সুমন-সোনিয়া দম্পতি। রাত ১২টার দিকে তাদের একমাত্র সন্তান সোহানের কান্না শোনা যায়। তার কান্না শোনার পর পাশের ঘর থেকে দাদা জামাল শেখ ছেলের ঘরে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ডাকে কেউ সাড়া না দেওয়ায় তিনি ঘরের কাঠের জানালা ভেঙে ফেলেন। পরে জানালা দিয়ে দেখেন তার ছেলে রশির সঙ্গে ঝুলছেন। আর ছেলের বউ উপুড় হয়ে চৌকির ওপর পড়ে আছেন। এসময় জামাল শেখ চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে ঘরের দরজা ভেঙে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় খবর দেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মরদেহ দুটি থানায় নিয়ে যায়। পরে রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে সুমন গলায় রশি পেঁচিয়ে এবং তার স্ত্রী সোনিয়া বৈদ্যুতিক শক নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
সুমনের বাবা জামাল শেখ বলেন, রাত পৌনে ১২টার দিকে নাতির কান্নার শব্দ শুনে ঘরের দিকে এগিয়ে যাই। গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও ডাকাডাকি করি। সাড়া না দেওয়ায় ঘরের জানালা ভেঙে দেখি ছেলে ঘরের আঁড়ার সঙ্গে রশিতে ঝুলছে আর ছেলের বউ চৌকিতে পড়ে আছে। এরপর চিৎকার শুরু করলে আবাসনের লোকজন ছুটে আসে এবং ঘরের দরজা ভেঙে ওদের ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় ডাক্তার এসে তাদের মৃত ঘোষণা করে এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
সোনিয়ার বাবা লিটন বলেন, মোবাইলে খবর পেয়ে রাতেই আবাসনে ছুটে আসি। এসে দেখি আমার মেয়েকে ঘরের বারান্দায় শুইয়ে রাখা হয়েছে আর জামাইকে চিকিৎসা করা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় আত্মীয়-বাড়ি বেড়ানো শেষে বাড়ি ফিরেছে। কীভাবে মারা গেছে জানি না। ময়নাতদন্ত করলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
কয়া আবাসনের সভাপতি আজিবর রহমান বলেন, রাত ১২টার দিকে খবর পেয়ে দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি মেয়ের গলায় বৈদ্যুতিক তার আর ছেলেটি আঁড়ায় ঝুলছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, এ বিষয়য়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না এই ঘটনা কি কারণে ঘটেছে।