সেই গণকবর সংরক্ষণ ও সমাধি নির্মাণের আশ্বাস সিটি মেয়র আরিফের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
আজ আমরা বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন করেছি। পঞ্চাশ বছর পর এসেও মুক্তিযুদ্ধের এমন একটি বেদনাবিধুর ইতিহাস আড়ালে পড়ে থাকা আমাদের জন্য লজ্জার, বললেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় সাত শহিদ স্মরণে ‘লেখা আছে অশ্রু জলে’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা বলেন তিনি।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর ১৬ ডিসেম্বর সকালে মাইন বিস্ফোরণে এই এলাকারই এক বাসায় নিহত হন একই পরিবারের ৯ সদস্য। মির্জাজাঙ্গাল এলাকায়ই সমাহিত করা হয় তাদের।
দীর্ঘদিন আড়ালেই পড়েছিলো এই আত্মত্যাগের ইতিহাস। গত কয়েকবছর থেকে অজানা এই ইতিহাস উন্মোচন করে শহিদ স্মরণের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে যে জায়গায় সমাহিত করা হয়েছিলো ৭ শহিদকে তা আজও অরক্ষিত। গণকবরের জায়গায় গড়ে উঠেছে স্থাপনা।
বৃহস্পতিবার স্মরণানুষ্ঠানে এসে এই বিষিয়েও কথা বলেন মেয়র আরিফ।
তিনি বলেন, নগরীর ভেতরে এই গণকবরের কথা আমার জানা ছিল না। আজকে জানলাম। আমি অবশ্যই এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবো। এই মাসেই শহিদ পরিবার, জায়গার মালিক পক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসবো। সবার সহযোগিতায় এই গণকবর সংরক্ষণ ও সমাধি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আয়োজক কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘লেখা আছে অশ্রুজলে’ নামে এই স্মরণানুষ্ঠানের।
৫০ বছর আগের সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে আয়োজকদের অন্যতম আব্দুল করিম কিম জানান, ১৯৭১ সালে বিজয় দিনের সকালে সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল মনিপুরী রাজবাড়ীতে ঘটে শেষদিনের শেষ শোক গাঁথা। সিলেট মিউনিসিপ্যালটির সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ ও প্রকৌশলী গোপেশ চন্দ্র দাসের পরিবারের ৯ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় মর্টার শেলের আঘাতে।
সেই নয় শহীদের সাত জনকে সমাহিত করা হয় মির্জাজাঙ্গালে বিশ্বম্ভ আখড়ার একটি বাড়িতে। যে বাড়িতে ডা: এন্দ ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতেন। সেই বাড়ির পেছনের সামান্য জায়গাতে সমাহিত করা হয় সাত শহীদকে। যা সপ্ত শহীদের সমাধি বা গণকবর। সেই গণকবর আড়াল করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা। গণকবরের একাংশে নির্মাণ করা হয়েছে গোডাউন।
স্মরণসভার আগে সেইদিনের ঘটনা যে সময়ে ঘটেছিলো, ৫০ বছর পর ঠিক সেই সময়ে, সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে এই গণকবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এরপর মনিপুরী রাজবাড়ি মাঠে শুরু হয় ‘লেখা আছে অশ্রু জলে’ শীর্ষক নয় শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান।
রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, সিলেট অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশন করে শোক সংগীত ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রু জলে’।
সিলেটের নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক ও বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আয়োজন কমিটির প্রতিনিধি আব্দুল করিম কিম-এর সঞ্চালনা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় শোকের ইতিহাস তুলে ধরেন শহীদ পরিবারের সন্তান এডভোকেট পরীক্ষিত এন্দ ও তাপস বন্ধু দাস।
বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আল-আজাদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, পূজা উদযাপন পরিষদ, সিলেট মহানগরীর সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সহ-সভাপতি উজ্জ্বল দাস, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন, দুষ্কাল প্রতিরোধ আন্দোলনের দেবাশীষ দেবু, আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান সিলেটের রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী প্রতীক এন্দ, সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জয়দ্বীপ দাস সুজক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতির পরিচালক সুকান্ত গুপ্ত, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা নিরঞ্জন দাশ, লেখক-গীতিকার আশফাকুর রহমান প্রমুখ।