জামিনদার ছাড়াই আজ থেকে ঋণ দিচ্ছে ‘বিকাশ’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:২৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দেশের মানুষের হাতে হাতে মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবা পৌঁছে গেলেও এতদিন ঋণ নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। উপরন্তু ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে পাওয়া আমানতের টাকা শহরে এনে বিনিয়োগ করেছে। অথচ অল্প পরিমাণ টাকার জন্যও গ্রামের মানুষ চড়া সুদে ঋণ নিতে ছুটেছে মহাজন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে। এবার সেই অবস্থার অবসান ঘটছে।
দেশের সবচেয়ে বড় মুঠোফোনের আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশ আজ বুধবার থেকে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। বিকাশের গ্রাহকদের এ ঋণের সুবিধা দিচ্ছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড।
এই ঋণের জন্যে বিকাশের গ্রাহকদের ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা বা এজেন্টের কাছে যেতে হবে না। সিটি ব্যাংক ও বিকাশের কর্মকর্তারা নতুন এই সেবাকে ‘ডিজিটাল ন্যানো লোন’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিকাশের রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি গ্রাহক। এই ঋণের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, আবেদন করার সময় কোনো নথিপত্রের দরকার হবে না। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ক্লিক করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঋণ পাওয়া যাবে। ৯ শতাংশ সুদে ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন মাস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘এমন ক্ষুদ্র ও তাৎক্ষণিক ঋণ দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। কারণ, গ্রামের মানুষ এখনো চড়া সুদের ওপর নির্ভরশীল। এই উদ্যোগ সফল করতে প্রয়োজনীয় নীতি–সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। আরও ব্যাংক এমন উদ্যোগে আগ্রহী হলে সুফল পাবেন দেশের জনগণ।’
২০১২ সালে কেনিয়ায় প্রথম ডিজিটাল ঋণ চালু হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুলাই মাসে সিটি ব্যাংককে পরীক্ষামূলকভাবে বিকাশের গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেয়। সেই অনুযায়ী বিকাশের ৩৫ হাজার গ্রাহককে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয় সিটি ব্যাংক। ৯ শতাংশ সুদ ও ২ শতাংশ মাশুলে ঋণ দেওয়া হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। এসব ঋণের প্রায় ৯৬ শতাংশ ফেরত আসে। খেলাপি হয় মাত্র ৪ শতাংশ। এর পরিপ্রক্ষিতে সিটি ব্যাংককে ডিজিটাল ঋণ চালুর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঋণের বার্ষিক সুদহার ৯ শতাংশ। আর ঋণের মাশুল হবে ঋণের দশমিক ৫ শতাংশ।
সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিকাশের লেনদেন প্রতিবেদন ও ব্যবহারের ধরন দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই (এআই) ঠিক করে দেয়, গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য কি না। অতিক্ষুদ্র এই ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে সিটি ব্যাংক ঋণ দেয়। বিকাশ অ্যাপে ক্লিক করে ঋণের আবেদন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হলে মুহূর্তেই ঋণের টাকা চলে যায় গ্রাহকের বিকাশ হিসাবে।
ঋণ পেতে গ্রাহককে তার বিকাশ অ্যাপ থেকে ‘লোন’ আইকনে ক্লিক করতে হবে। এরপর কেওয়াইসি তথ্য সিটি ব্যাংকের সঙ্গে শেয়ার করার অনুমতি দিতে হবে। কত টাকা ঋণ নিতে চান এবং ঋণের মেয়াদ কত হবে তা নির্বাচন করতে হবে। এরপর ঋণ নেওয়ার শর্তাবলিতে সম্মতি জানাতে হবে। বিকাশ পিন দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্রাহকের বিকাশ হিসাবে ঋণের টাকা জমা হয়ে যাবে। যারা পাবেন, তারা তাৎক্ষণিকই পেয়ে যাবেন।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর বলেন, ‘একজন সবজি বিক্রেতার প্রতিদিন চলতি মূলধন ঋণ প্রয়োজন হয়। তিনি সকালে ঋণ নিয়ে পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে সারা দিন বিক্রি করবেন। এরপর আবার শোধ করে দেবেন। এটাই হলো বিকাশের গ্রাহকদের জন্য সিটি ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ সেবা, যা পেতে কোনো জামিনদার লাগবে না।’