সমঝোতা হয়নি সিলেট চেম্বারে সংকটের আভাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। ভোটারের রায়ে পরিচালক পদে ফলাফল সমান হওয়ার পর সমঝোতায় গঠন করা যায়নি পরিচালনা পর্ষদ। এ নিয়ে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিলেটে ছিল উত্তেজনা বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে হয়েছে মহড়া পাল্টা মহড়া। এ কারণে রাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় চেম্বার বিল্ডিংয়ের আশেপাশের এলাকায়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সমাজ চোখ রাখছেন চেম্বারের দিকে। ভেতরে ভেতরে বিরোধ আরও চাঙ্গা হয়ে উঠছে। এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে চেম্বারের আপিল বোর্ডে আপিলসহ আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিষদের নির্বাচিত পরিচালকরা। সিলেট চেম্বার হচ্ছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন।
তবে এই চেম্বারের কর্তৃত্ব নিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের শুরুতে ব্যবসায়ীদের একাংশ সিলেট চেম্বার ছেড়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার গঠন করেন। এখন দু’টি চেম্বারের কার্যক্রমই চলমান। এরপরও সিলেটে চেম্বারের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটেনি। প্রতি বছর নির্বাচন এলেই সিলেট চেম্বার অব কমার্সে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এবারের নির্বাচন নিয়ে প্রথমে সমঝোতায় পরিচালনা কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হলেও ব্যবসায়ীদের একাংশ সেটি মানেননি। এ কারণে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের ব্যানারে গত শনিবার সিলেট চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে ঘিরে সিলেটে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচনে চারটি ক্যাটাগরিতে ২২ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। কাকতালীয় ভাবে দুই প্যানেলেই সমানসংখ্যক পরিচালক নির্বাচিত হন। অর্থাৎ ১১ জন করে পরিচালক পদে নির্বাচিত হন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী উভয় প্যানেলের তরফ থেকে ভোটের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি পদে প্রার্থীদের নাম রোববার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে জমা দেয়। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ সভাপতি পদে আবু তাহের মো. শোয়েব (বিদায়ী সভাপতি), তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম দেয়। বিপরীতে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ সভাপতি পদে আবদুর রহমান জামিলের নাম জমা দিয়েছে। সিনিয়র সহসভাপতি পদে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম জমা দেয়। আর সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ দেয় জিয়াউল হকের নাম। সহসভাপতি পদে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ মো. আতিক হোসেন এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ হুমায়ূন আহমদের নাম জমা দেয়। ফলে পরিচালনা পরিষদ গঠনে নতুন করে সমঝোতার আলোচনা শুরু হয়। এতেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি মুখোমুখি থাকা দুই প্যানেলের পরিচালকরা।
রাতে সিলেট চেম্বারের হলরুমে এ নিয়ে সিলেটের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হলেও এতে কোনো কাজ হয়নি। সোমবার রাতে গঠনতন্ত্রের বিষয়টি উল্লেখ করে নির্বাচনের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর জব্বার জলিল সভাপতি পদে থাকা আবদুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি পদে থাকা হুমায়ূন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে দেন। ফলে রাত থেকেই সিলেট চেম্বারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর জেল রোড পয়েন্টে হচ্ছে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের বিল্ডিং। ভেতরে যখন পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে দুই প্যানেলের পরিচালকরা মুখোমুখি হন তখন বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এই উত্তেজনা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা দুই প্যানেলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে জেলরোড পয়েন্টে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। এরপর তাদের সরিয়ে দিলেও তারা চেম্বার ভবনকে ঘিরে অবস্থানে থাকেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি আজবাহার শেখ ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের জানান- খবর পেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ এসেছে। যারা চেম্বার ভবনের সামনে ছিল তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে মধ্যরাতে সিলেট চেম্বার ভবন থেকে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে পরিচালক পদে নির্বাচিত ও সভাপতি প্রার্থী আবদুর রহমান জামিলের নেতৃত্বে ১১ জন পরিচালক বেরিয়ে আসেন। এরপর তারা মিছিল সহকারে নগরীর চৌহাট্টা এলাকা দিয়ে চলে যান। এর আগে অবশ্য চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ড মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে সিলেট চেম্বারের নতুন পরিচালনা বোর্ডের নাম ঘোষণা করেন। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে সভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহসভাপদি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। একই প্যানেল থেকে সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বিজয়ী হন।
সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড জানায়- তাহমিন আহমদের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চেম্বারের সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবদুর রহমান জামিল ও হুমায়ুন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। সংঘবিধি মেনেই সেটি করা হয়েছে। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। এদিকে সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল সিলেটের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চেম্বারের সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের ১১ পরিচালক। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান- সিলেট চেম্বারে এবার যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে সেটি অতীতে কখনোই ঘটেনি। এটি সিলেটের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক আবদুর রহমান জামিল বলেন, চেম্বারের যে প্রেসিডিয়াম গঠন করা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে আপিল করা হবে। আপিলে বিষয়টির সুরাহা না হলে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ‘তাহমিন আহমদ একটি লিখিত আপত্তি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড বরাবরে প্রদান করেছেন। ওই আপত্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- এরপর সংঘবিধির অজুহাতে সভাপতি পদে আবদুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি পদে হুমায়ূন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে পূর্বেই লিখে রাখা রায় প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।’ নির্বাচনী বোর্ডের এহেন অযৌক্তিক, অন্যায়ভাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে একতরফাভাবে মননোয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে সিলেটের সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজ মর্মাহত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নির্বাচিত পরিচালক হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, দেবাংশু দাস মিঠু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।