সিলেটে রপ্তানিতে খুলছে সম্ভাবনার দ্বার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ৫:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সিলেটের বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা থাকলেও রপ্তানি করা যাচ্ছিল না। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়্যারহাউস ও কার্গো কমপ্লেক্স না থাকায় আটকে ছিল রপ্তানি কার্যক্রম।
বিমানবন্দরে ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ নির্মাণ হওয়ায় দূর হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সিলেট থেকে আকাশপথে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে থাকছে না আর কোনো বাধা। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে চালু হচ্ছে এ কার্গো কমপ্লেক্স। সেই সঙ্গে খুলছে বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দ্বার।
ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেট অঞ্চলের শাকসবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, পান, হিমায়িত মাছ, নানা জাতের সুগন্ধি চাল, ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী শাড়ি, সাতকরা, জারা লেবু, বিন্নি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুঠির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে।
২০১১ সালে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। নানা জটিলতায় কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইটটি। দীর্ঘ বিরতি শেষে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ফের চালু হয় বিমানের সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট। সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। কিন্তু ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ না থাকা ও ওয়্যারহাউস জটিলতায় সিলেট থেকে তাঁরা পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানান, সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ নির্মাণের প্রথম অংশের কাজ শুরু হয় গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে।
বর্তমানে কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ। তিনি জানান, এই কার্গো কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ১০০ টন। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ ডেডিকেশন সিস্টেম স্ক্যানার মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে। কার্গো কমপ্লেক্স চালু হলে সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুটিরশিল্প পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হাফিজ আহমদ আরও জানান, কার্গো কমপ্লেক্স ও আনুষঙ্গিক সব কাজ সম্পন্নের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবেন। তাঁদের অনুমতি পেলেই পণ্য রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকায় কার্গো টার্মিনাল ও কমপ্লেক্স চালুর পরই সরাসরি রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। পরবর্তীতে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে এই রপ্তানির সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে।
এদিকে, শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য বর্তমানে ঢাকার শ্যামপুরে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনুমোদিত ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিতে হয়। শ্যামপুরের এই সুবিধা যাতে সিলেটে পাওয়া যায় সে জন্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। সিলেটে কার্গো টার্মিনাল ও এক্সপোর্ট কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ায় স্থানীয় রপ্তানিকারকেরা সহজেই পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের শোয়েব বলেন, সিলেট থেকে ফ্লাইট চালুর পর সিলেট চেম্বার রপ্তানিকারক, উৎপাদক ও ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছে, যোগাযোগ রাখছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্বয় করা গেলে রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগবে।