ড্রেনে পড়ে কবির মৃত্যু : সিসিকের কোনো দায় নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
শুক্রবার ছিলো কবি আবদুল বাসিত মোহাম্মদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্মিতব্য একটি অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। সিসিকের গাফিলতিতে মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা এক বছরে তার পরিবারের কোনো খোঁজও নেয়নি সিসিক। তবে সিটি কর্পোরেশনের একজন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি পীড়া দিয়েছিলো হাইকোর্টের গোলাম সোবহান চৌধুরীর। তিনি জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছিলেন। রিটে নিহতের পরিবারের জন্য দুই কোটি টাকা ক্ষতিপুরণ প্রার্থনা করেন তিনি। আদালত আবদুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন সে রিপোর্টও ইতোমধ্যে জমা হয়েছে আদালতে। কাল শুনানির কথা রয়েছে।
আইনজীবী গোলাম সোবহান চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ উন্নয়নের কারণে নগরের সব বাসিন্দা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এমন দায়িত্বহীন কাজেরই বলি হয়েছেন প্রবীণ সাহিত্যিক ও শিক্ষক আবদুল বাসিত মোহাম্মদ। তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও উন্নয়নকাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে আমি সিটি করপোরেশনের একজন নাগরিক হিসেবে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালতের নির্দেশে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসন। রোববার এ বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেদন আমাদের পক্ষে এসেছে এখন আমরা অন্তর্বর্তীকালীন ৫০ লাখ টাকা প্রদানের আদেশ চাইব।
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর আম্বরখানার হুরায়রা ম্যানশনের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন খোলা ড্রেনে পড়ে আবদুল বাসিত মোহাম্মদের পেটের মধ্যে রড ঢুকে যায়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১০ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। সিলেটের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আবদুল বাসিত মোহাম্মদ কবি ও ছড়াকার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
আবদুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর ঘটনায় জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করে নগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। এসব প্রতিবাদী কর্মসূচি থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি ওঠে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট কাজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হক, সহকারী প্রকৌশলী রজি উদ্দিন, উপসহকারী প্রকৌশলী দেবপ্রদ দাস, কোন কার্যসহকারী ও ঠিকাদার অরবিন্দ পালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোনা ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন।
আবদুল বাসিত মোহাম্মদের ছোটভাই মোহাম্মদ ইয়াহইয়া আহমদ জানান, আবদুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর পর শুধু সমবেদনা জানানো ছাড়া সিটি কর্পোরেশন আর কিছুই করেনি। এই এক বছরে একবার খোঁজও নেয়নি নিহতের পরিবারের। আমাদের দাবি ছিলো তার স্মরণে কোনো স্থাপনা বা কিছুর নামকরণের সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, আমরা পরিবারের সাথে যে যোগাযোগ করিনি তা নয়। মেয়রও যোগাযোগ করেছেন. তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় পরে আর যোগাযোগ করা যায়নি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি আর এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।