বড় হলেও আজ ভালো নেই পল্লীকবির ‘ছোট গাঁ’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
পল্লীকবি জসীম উদদীনের বাসস্থান ছিলো গোবিন্দপুর গ্রামে। কুমার নদীর তীর ঘেঁষা এই গ্রামটিই কবির ‘ছোট গাঁ’। যা আজ ফরিদপুর শহরের অন্তর্ভুক্ত। ‘ছোট গাঁ’ নিয়ে কবি লিখেছিলেন, ‘তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়/গাছের ছায়ায় লতায়-পাতায় উদাসী বনের বায়।’
কিন্তু কবির সেই ‘ছোট গাঁ’ আর ছোট নেই। সীমানা বেড়ে আকারে বড় হলেও ফরিদপুর শহর ভালো নেই আজ। এত বছরেও শহরটি পরিপূর্ণ রূপ-যৌবন লাভ করতে পারেনি। শহরটা এলোমেলো। অগোছালো পরিবেশ। সব মিলিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত এই ফরিদপুর শহর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের শুরুর নাম ফতেহাবাদ। ১৮৫০ সালে জেলার যাত্রা শুরু। সত্তরের দশকে ফরিদপুর শহরে মাত্র দুটি বহুতল ভবন ছিল। এখন শহরের বুক জুড়ে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টি ১৭তলা বিশিষ্ট ভবন গড়ে উঠেছে। পৌরসভা যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৯ সালে। যা এখন ‘এ’ গ্রেডের পৌরসভা। বর্তমানে পৌরসভার আয়তন ৬৬ দশমিক ৩১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩২ জন।
শহরের সীমানা বেড়ে পূর্ব আর পশ্চিমে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ কিলোমিটার। উত্তর-দক্ষিণে বেড়েছে ৮ কিলোমিটার। ফরিদপুর পৌরসভায় রয়েছে ১৮৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা। এর মধ্যে কার্পেটিং ৯৯ কিলোমিটার, ইটের সড়ক ৫ কিলোমিটার আর কাঁচা সড়ক রয়েছে ৭০ কিলোমিটার। শহরে ১৭১ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার নর্দমার বর্জ্য পার্শ্ববর্তী কুমার নদীতে ফেলা হয়। ফলে দূষণের শিকার নদীর পানি।
রিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলে যানজট যেন নিত্যসঙ্গী। পৌর কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধ নাগরিকদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণে শহরটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন।
শহরটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে পরিপূর্ণ থাকলেও সেবার মানে একেবারেই পিছিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার দিক দিয়েও বিরাজ করছে স্থবিরতা। একটি মাত্র সিনেমা হল কোনোমতে টিকে থাকলেও ভালো চলে না। তাও বন্ধের উপক্রম। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। শেখ রাসেল পৌর পার্ক নামে থাকলেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শিশু-কিশোর-অভিভাকরা যেতে অনাগ্রহী।
এ ব্যাপারে কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী বিজয় পোদ্দার বলেন, শহরটি আকারে বড় হলেও মানে বড় হয়নি। নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত প্রাণের শহর ফরিদপুর। ফরিদপুরবাসী এখন পদ্মাসেতু চালুর স্বপ্নে বিভোর। সেতুটি চালুর পর উন্নতির ধারায় পৌঁছাতে পারবে ফরিদপুর এমনটাই প্রত্যাশা শহরবাসী।
ফেসবুকে ফরিদপুর সিটি পেজের এডমিন ইমদাদ হোসেন বলেন, আগে প্রতিবছর ফরিদপুরের অন্যতম বড় মেলা জসিম মেলা হতো, কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা আজ হারানোর পথে। ফরিদপুরের মানুষ এখনো চায় যেন সেই আগের মতোই প্রতিবছর এখানে আবারও মেলার আয়োজন করা হয়।
ফরিদপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য, সংবাদকর্মী সঞ্জীব দাস বলেন, নানা অপূর্ণতা রয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত শহরটি। তারপরও শহরের মানুষের আশা ফরিদপুর সিটি করপোরেশন হবে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, হাসপাতালটিতে জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। কিন্তু পুরোপুরি সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। কারণ জনবল সংকট। ২৩৬টি পদের মধ্যে ১০৬টি চিকিৎসক পদ শূন্য। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালেও ৩৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ১৪ জন চিকিৎসককে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হয়।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোসের ভাষ্য, অপরিকল্পিত নর্দমা, সংস্কার না করায় বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা দূর করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বেহাল সড়কগুলোর দরপত্র আহ্বান শেষের দিকে। দ্রুত কাজ শুরুর প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নর্দমার বর্জ্য নদীতে না ফেলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ চলছে।