জাফলংয়ে পুলিশের সামনেই আলীমের ওপর সশস্ত্র হামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১:১৭ অপরাহ্ণ
জাফলং নিয়ে গত দুই মাস ধরে উত্তেজনা চলছে। প্রায় ২০ কোটি টাকার বালু লুটের পর প্রতিদিন পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে পুলিশের শেল্টারে ২০-২৫ লাখ টাকার পাথর লুট করা হচ্ছিল। বহিরগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে পাথর লুটের ঘটনায় ক্ষেপে উঠে এলাকার মানুষ। ৫ দিন আগে এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় যুবক আলীম উদ্দিন জাফলংয়ে পাথর লুট বন্ধ করে খেকোদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা। ঘটনার ৫ দিনের মাথায় পাথরখেকোরা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে প্রতিবাদকারী আলীম উদ্দিনকে উপর্যুপরি কুপিয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে জাফলং বাজারের কাছে নয়াবস্তি এলাকায় এ ঘটনার পর রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ পাথরখেকোদের বাড়িতে তল্লাশি চালালেও কাউকে খুঁজে পায়নি।
এদিকে ঘটনায় গুরুতর আহত আলীম উদ্দিনকে রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। জাফলং পর্যটন এলাকা হলেও পাথর লুটপাটকারীদের কাছে এটি হচ্ছে পাথরের স্থান।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কয়েক বছর ধরে জাফলংয়ে অবাধে লুটপাট চালাচ্ছে। এবার পিয়াইন নদীর তীরের নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা আলীম উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয়রা বালু ও পাথর লুট বন্ধে নেমেছে। কয়েক মাস আগে তারা পিয়াইন নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। ওই সময় এলাকার এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে আলীম উদ্দিন ও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ইনসান আলী নালিশ দিলেও গোয়াইনঘাটের ফজলু পরিবার ও পুলিশ পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে মন্ত্রীর নির্দেশনা মানেনি।
এছাড়া সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছেও আলীম উদ্দিন নিজেই বালু ও পাথর বন্ধের জন্য আবেদন করেছিলেন। ফজলু পরিবার ও পুলিশের শেল্টারে বালুর পর গত এক মাস ধরে জাফলংয়ের নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি, জুমপাড়সহ কয়েকটি এলাকায় যন্ত্রদানব সেইভ মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫ লাখ টাকার পাথর লুট করা হচ্ছিল। সশস্ত্র মহড়া চালিয়ে এলাকার মানুষের জমি দখলে এই পাথর লুটপাটেও এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদী হয়েছিলেন আলীম উদ্দিন। গত শনিবার এলাকার শতাধিক মানুষ কোয়ারিতে নেমে পাথরখেকোদের তাড়িয়ে দেন। এতেই আলীম উদ্দিনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পাথরখেকোরা।
আলীম উদ্দিনের ছোট ভাই রাজন আহমদ গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, বালু লুটপাটের পর পাথরখেকো জামাই সুমন ও ফয়জুলের নেতৃত্বে বালু লুটপাট চলছিল। ৫ দিন আগে তার ভাই আলীম উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয়রা পাথর উত্তোলন বন্ধ করে মেশিনসহ নৌকা বিদায় করে দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েই পুলিশের শেল্টারে থাকা পাথরখেকোরা জাফলংয়ে নিরাপদে পাথর লুট করতে এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, হামলার সময় ঘটনাস্থলের অদূরে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এসআই লিটন চন্দ্র দে পুলিশ দল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ঘটনা দেখলেও এগিয়ে আসেননি। বরং ঘটনার পর পাথরখেকোদের তিনি পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আলীম উদ্দিন জাফলং বাজার থেকে মোটরসাইকেল যোগে নয়াবস্তি গ্রামের নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে পাথরখেকো চক্রের সদস্য ফিরোজের বাড়ি থেকে এই হামলা চালানো হয়। পাথরখেকো চক্রের মূল হোতা জামাই সুমন, বিশ্বনাথী ফয়জুল, সমেদ, সাবু, ফিরোজ, করিম, আকবর, আজকর, সুহেলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আলীম উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে আলীমের ডান হাত ভেঙে গেছে। তার মাথা, কাঁধ, পায়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়। আলীম উদ্দিনের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারী পাথরখেকোরা মেলার মাঠের আস্তানার দিকে চলে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয় জনতা ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কয়েকটি দল সেখানে গিয়ে আলীম উদ্দিনকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাতেই আলীম উদ্দিনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়। রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কয়েকটি দল নয়াবস্তি ও মেলার এলাকায় গিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালালেও হামলাকারীদের খুঁজে পায়নি। এ ঘটনার পর থেকে জাফলংয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার লোকজন জানান, জাফলংয়ে মেলার মাঠ হচ্ছে পাথরখেকো চক্রের নিরাপদ আস্তানা। ওখানের একটি বাড়িকে তারা অফিস হিসেবে ব্যবহার করে। রাতে ওখানে বসেই হয় টাকা ভাগবাটোয়ারা।
পুলিশের বিট কর্মকর্তা এসআই লিটন, এএসআই মারুফ রাতে মেলার মাঠের ওই আস্তানায় বসে আড্ডা দেয়। এ কারণে দিনে দিনে পাথরখেকো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। গোয়াইনঘাট থানার এসআই লিটন চন্দ্র জানিয়েছেন- ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আলীম উদ্দিনকে উদ্ধার করেন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জাফলং বাজার ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।