৭৫বর্ষী বালাগঞ্জ ডি এন স্কুল দাঁড়িয়ে আছে বাঁশের খুঁটির উপর!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৬:৪৩,অপরাহ্ন ০৮ ডিসেম্বর ২০২১
‘ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বালাগঞ্জ ডিএন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বেহাল দশা ভাবতেই কেমন লাগে, ছাল মরিচা ধরে ভেঙে যাবার উপক্ষম, আলাদা এক বাঁশের খুঁটির উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বারান্দা এক অংশ, তা ভাঙাই থাকবে। এটা দেখার কেউ নাই। একটা দুর্ঘটনা না ঘটলে কেউ এদিকে খেয়াল করবে না।’ সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের অবস্থিত প্রায় শতবর্ষী (৭৫ বছর) বিদ্যাপীঠ বালাগঞ্জ ডি এন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে ওঠে ১৯৪৬ সালে। এই বিদ্যালয়ে পাওয়া একজন অভিভাবক আরেকজনের সঙ্গে আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলেছেন, যা প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে শোনেন। অভিভাবকদের কথার বাস্তবতাও ভিন্ন নয়।
বিদ্যালয়টি সরকারি হলেও সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় বিদ্যালয়ের নথিপত্রের কক্ষ, সাইন্স ল্যাবরেটরি, মসজিদ, শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ফাঁটল, বাঁশের সাদ, কক্ষের সকল সরঞ্জামাদি ভেঙে শিক্ষার্থীদের উপর টুকরো টুকরো হয়ে পরছে। এতে প্রাথমিক ভাবে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে সুত্রে জানা গেছে। অপরদিকে শিক্ষক সংকটে থাকায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ হারাচ্ছে তার পূর্ব ঐতিহ্য। ২০১৫ সালে এসএসসিতে ছয়টি এ প্লাস আসে, বছরে বছরে কমতে কমতে ২০১৯ সালে শূন্যের কোটায় পৌঁছে। এতশত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন মাত্র ৯ শিক্ষক। এতে শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে দিন দিন।
বিদ্যালয়ের কোমলমতি ৯শ ৯জন শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারান্দায় হাটছে এবং ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে বাইরে ভেতরে বহুতল বিশিষ্ট ২টি এবং একটি টিনসেট ভবন রয়েছে। টিনসেট একমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে পরার আতঙ্ক মাথায় নিয়েই ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এ বিদ্যালয় ও বাইরের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, মহামারি কোভিড এর কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকে। স্কুল খুলার পর শিক্ষার্থীদের পদচারণে শিক্ষাঙ্গন প্রাণবন্ত হয়ে উঠলেও ক্লাস চলার সময় ভিমের ভেঙে যাবার শব্দ শুনে শ্রেণিকক্ষে পাওয়া যায়নি একজনকেও। এ ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা ভবন ধসে পড়ার আশংকায় গত গরম মৌসমে ফ্যান ব্যবহার করতে পারেনি।
শুধু শ্রেণিকক্ষের বেহাল দশা নয় সাথে অফিস কক্ষগুলোর অবস্থা নাজেহাল। সরেজমিনে দেখা সরকারি নথিপত্রে টালমাটাল এক কক্ষে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে নথিপত্র নষ্ট হয়। দরজা, জানালা ভাঙা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, দেয়াল ও ছাদের আস্তর খসে পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গায়ে এমনটাও শুনা গেছে। বিদ্যালয়ের এমন অবস্থার পরও কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ভবনটিকে পরিত্যক্ত বা মেরামতের ঘোষণা করেনি। ১৯৪৬ সনে নির্মানের পর টুকটাক সংস্কার হলেও ভবনটি যেকোন সময় ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয়। দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হ্রাস পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিদ্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে বার বার অবগত করছি ইউএনও পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার গুণগত মান রক্ষার জন্য আশু শিক্ষক প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুল জাতীয়করণ হওয়ার পর পরই পাঁচজন শিক্ষক অবসরে চলে যান ফলে শিক্ষক সংকটে পড়ে বিদ্যালয়টি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানান, বিদ্যালয়ের টিনসেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক অবস্থা আমি পরিদর্শন করেছি। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি বরাদ্দ দিয়ে ভবনটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।