ধর্ষণ মামলার রায় দেখে যেতে পারল না সেই কিশোরী, বেঁচে রইল একমাত্র সন্তান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ৭:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের দায়ে শাহীন মিয়া নামে এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ এ রায় ঘোষণা করেন।
তবে সাড়ে পাঁচ বছর আগে নিজের করা মামলার বিচার দেখে যেতে পারলো না ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী। সন্তান প্রসবের দিন মারা যায় সে। তার একমাত্র ছেলে সন্তান এখন নানা-নানির কাছেই বড় হচ্ছে।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত শাহীন মিয়া উপজেলার জিকুয়া গ্রামের ইয়ার হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া।
জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার জিকুয়া গ্রামের শেফালী বেগমকে ২০১৫ সালের ১ জুলাই গভীর রাতে তার ঘরে ধর্ষণ করে চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া। এক পর্যায়ে শেফালী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথাবার্তা চললেও শাহীনের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মা বেঁকে বসেন। তিনি কোনোভাবেই শেফালীকে ছেলের বউ করতে রাজি হননি। এ নিয়ে টানাটানিতে চলে যায় প্রায় আটমাস।
২০১৬ সালের ৩১ মার্চ তিনি বাদী হয়ে আদালতে শাহীনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ১ মে তিনি প্রসব বেদনা নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২ মে পুত্র সন্তান প্রসব করেন। ওইদিনই শেফালী এক্লাম্পসিয়া (খিঁচুনি) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পরবর্তীতে শাহীন ওই শিশুর বাবা অস্বীকার করে আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানান। আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবেদনে শিশুটি শাহীনের সন্তান বলে প্রমাণিত হয়। ওই মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু হাসেম মোল্লা মাসুম জানান, রায়ের আদেশে বলা হয় ধর্ষিতার একমাত্র শিশু সন্তান শাহানুর তুহিনের ব্যয়ভার রাষ্ট্রপক্ষ বহন করবে। ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শাহিন মিয়ার কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। শিশুটির বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মায়ের আত্মীয় স্বজনের কাছে প্রতিপালিত হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছাড়া দণ্ডিত শাহীন মিয়াকে ধর্ষণের ফলে জন্ম গ্রহণকারী শিশু শাহানুরের বৈধ অভিভাবক বলে গণ্য করা যাবে না।