অপুষ্টিতে ভুগছে সুনামগঞ্জের ৫২ শতাংশ শিশু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হলেও দারিদ্রতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় অপুষ্টিতে ভুগছে এ অঞ্চলের শিশুরা। সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের জরিপ অনুযায়ী জেলায় ৫২ শতাংশ শিশুরা অপুষ্টিজনীত রোগে আক্রান্ত।
অভাব অনটনের ফলে শিশুদের জন্য আলাদা করে পুষ্টিকর খাবারের জোগান দিতে না পারা ও সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে অভিভাবকদের।
সুনামগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়াতথ্য মতে, এ জেলায় বর্তমান খর্বাকার রোগে ভুগছে ৫২ শতাংশ শিশু, ক্ষীনকার ১৫ শতাংশ শিশু, কম ওজন নিয়ে জজন্মগ্রহণ করা শিশুর সংখ্যা ২৬ শতাংশ এবং নিরাপদ মায়ের বুকের দুধ এর অভাবে ভোগছে ৫৫ শতাংশ শিশুরা।
অর্থ সংকট ও সচেতনতার অভাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জের শাল্লা, মধ্যনগর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশিই অপুষ্টির শিকার।
সরজমিনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও শাল্লা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখাযায় শহরের শিশুদের তুলনায় এ সকল অঞ্চলের শিশুরা রোগা ও বেটে। এছাড়া এ সকল গ্রামের মানুষের দিন আনি দিন খাই অবস্থা হওয়ায় আলাদাভাবে শিশুর বিকাশের দিকে মনযোগ নেই অভিভাবকদের।
সুনামগঞ্জ জেলা ধান ও মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও অন্যান্য শাক সবজি ফলন সংখ্যা কম হওয়ায় তিনবেলার খাবারের যোগান দেয়াই বর্তমানে কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষদের, তাছাড়া হাওরের জালে জেলেদের ছোট-বড় দেশি ও পুষ্টিকর মাছ উঠলেও সেই মাছ নিজের সন্তানদের না খায়িয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়িতে নিয়ে যান পাঙ্গাস মাছ। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষদের অভিযোগ সরকারিভাবে শিশুদের টিকা দান ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো ছাড়া আর কোন কার্যক্রম না থাকার।
শাল্লা উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, আমার চারটা ছেলেমেয়ে সবগুলাই বেশিরভাগ সময় অসুস্থ তাকে, ডাক্তার দেখাই কিন্তু ভালা কিচ্ছু কিনিয়া আনিয়া বাচ্চাগুনতে মুখও দেয়ার মুরদ নাই আমরার, আলু আর পাঙ্গাস মাছ ইটা দিয়াই চলরাম আমরা, যেদিন তাইনের একটু ভালা ইনকাম হয় তে একদিন মাংস খাইলায় কিন্তু বাজারও যে জিনিসের দাম বাড়ছে এখন তিনবেলা কোন রকম খাইয়া বাছিয়া আছি।
একই গ্রামের কৃষক জয়ন্ত দাস বলেন, ছেলে মেয়েরে কিতা খাওয়াইতাম বাজারও যে জিনিসের দাম আগুন, এখন ধান লাগানিত গেলেও টাকা লাগবো বেশি আমরা কিতা করতাম যা নিজে খাই তাই ছেলেরারে খাওয়াই, সরকার যদি আমরারে একটু দেখে তাইলে ভালা অইতো।
দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি এলাকার শিল্পী বেগম বলেন, বাজারও নতুন নতুন সবজি আইছে কিন্তু যে আগুন দাম ইতা কিনিয়া আনিয়া খাওয়ানি যাইতো না, স্বাস্থ্য কর্মীরা আয় তারা টিকা আর ভিটামিন ট্যাবলেট দেয় ইটাই শেষ আর কিচ্ছু করে না যা কইবার মুখে কয়, কিন্তু গরীবের কথা শুনিয়া লাভ নাই যদি পারে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)সুনামগঞ্জের সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা হাওর এলাকার অবহেলিত কৃষক জেলে থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষদের ফসল ও বিভিন্ন রকমের শাক সবজি উৎপাদন এবং এগুলোতে থাকা ভিটামিন সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি, এখন তারা যদি আমাদের দেয়া প্রশিক্ষণ বাস্তবিক অর্থে ব্যবহার করেন তাহলে তাদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা নিরসন করে অবশিষ্ট বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হতে পারবেন।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, হাওরের প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুরাই পুষ্টিহীনতা বেশি ভুগছে, তাদের তুলনায় শহর কেন্দ্রিক বসবাসকারীরা শিশুরা ভালো অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া হাওরের মায়েদেরও কিছুটা দায়ছাড়া ভাব রয়েছে এবং বর্তমানে এমনও দেখা যায় হাওরে অনেক পুষ্টিকর মাছ পাওয়া গেলেও সেটা তারা বিক্রি করে চাল ডাল আলু আর পাঙ্গাস মাছ নিয়ে যাচ্ছেন এছাড়া এ সকল মানুষ খাবারে বৈচিত্রতার অভাব রয়েছে, এক জরিপ দেখা গেছে সুনামগঞ্জের আনুমানিক ৬২.৪% পরিবার দৈনিক ব্যবহারের জন্য শুধুমাত্র প্রধান খাদ্য ক্রয় করে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছুই একটা করার নেই এখানে শুধু আমি একাই কাজ করি আমার বাকি পদগুলো শুন্য অবস্থানে রয়েছে, আমি একা সবদিক কিভাবে দেখবো আমরা প্রায় সময়ই নিয়োগের জন্য বলি কিন্তু এটা হয়েও হয়ে উঠছে না।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, জেলার প্রতিটি ওয়ার্ডেই পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রম চালু আছে এবং মা সমাবেশসহ নানা প্রচারনা করা হয় তবে এছাড়া আলাদাভে আমাদের হাতে কোন প্রকল্প নেই।