সিলেটে ওসি প্রদীপ ইস্যু : নাটের গুরু শওকত!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও নারী কনস্টেবলকে ইস্যুতে যখন তোলপাড় শুরু হয় তখনই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তাদের দুজনকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে সেই তদন্ত কমিটির কাছে কয়েকজন সাক্ষ্যও দিয়েছেন। পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে জেলা পুলিশের এএসআই শওকত আলী নামের এক পুলিশ সদস্যের নাম উঠে আসে। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ কোর্টের জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তদন্ত কমিটির কাছে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর)এএসআই শওকত আলী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাতে নারী কনস্টেবল ওসি প্রদীপের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র সরকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে ফোন করে জানান এএসআই শওকত আলী। যার জন্য তাকে মহানগর পুলিশের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষি হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার সাক্ষ্য দেয়ার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, সরাসরি কিছু না দেখলেও রাতে ওই নারী কনস্টেবল আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তার সন্দেহ হয়! এদিকে ঘটনার দিন ওই নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিয়ে আসা কনস্টেবল পিযুষের সাক্ষ্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। এ পর্যন্ত যারা তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউই ঘটনাটি সত্যি নয় বলে জানিয়েছেন। এরমধ্যে কোর্টের এক ইন্সপেক্টর তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন ওসি প্রদীপের সাথে গোলাপগঞ্জ থানার জিআরও শওকত আলীর জামিন সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে মনমালিন্য সম্প্রতি হয়।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা বলেন, পুলিশ নানা বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি সত্যি না কেউ পরিকল্পনা অনুযায়ি এই কাজ করেছে তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নারী কনস্টেবলসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, জেলা পুলিশ সদস্য ও গোলাপগঞ্জ থানার জিআরও শওকত আলীকে ঘটনার বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।
সূত্র জানায়, শাহপরাণ থানার নন জিআর ৫২/২১ এর মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত থেকে কানাইঘাটের দাবা বরনীর মাটি গ্রামের বাবুল আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোনায়ানা জারি হয়। এরপর গ্রেফতারি পরোনায়ানা তামিল করার জন্য শাহপরাণ থানার জিআরও অফিস থেকে কানাইঘাট থানায় পরোয়ানা প্রেরণ করা হয়। কানাইঘাট থানা পুলিশ গত ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা ভুক্ত আসামী বাবুলকে গ্রেফতার করে সিলেট আদালতে প্রেরণ করে। এরপর গোলাপগঞ্জ থানার জিআরও শওকত আলী বাবুল আহমদ ও কানাইঘাট থানার জিআরও মিলে আসামীকে শাহপরাণ থানা সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজির না করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-৫ থেকে জামিন করি নেন নিয়মনীতি না মেনে। বিষয়টি শাহপরাণ থানার জিআরও জানতে পারলে তিনি কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপের কাছে নালিশ দেন। তথন ইন্সপেক্টর প্রদীপ শওকত আলী ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে কারণ জানতে চান। তখন শওকত আলী তার কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আর জড়াবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। তখন ইন্সপেক্টর প্রদীপ তাকে শাহপরাণ থানার জিআরও এবং শাহপরাণ কোর্টের দায়িত্বে থাকা বেঞ্চ সহকারীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র সরকার জানান, নারী কনস্টেবল ৬ দিনের ছুটি নেয় বাড়ি যাওয়ার জন্য। ঘটনার দিন বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাত প্রায় ৮টার দিকে গোলাপগঞ্জ থানার জিআরও শওকত আলী ফোন করে জানায় এক নারী কনস্টেবল ওসি প্রদীপের কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এমন খবর পেয়ে তিনি কোর্টে আসার পথে প্রধান ফটকে কনস্টেবল পিযুষ ও ওই নারী কনস্টেবলকে দেখতে পেয়ে দাঁড় করিয়ে কোর্টে আসার কারণ জানতে চান। এসময় নারী কনস্টেবল জানান, মোবাইল ফোন ফেলে যাওয়ায় তিনি কোর্টে আসেন এবং পরের দিনের কিছু কাগজপত্র লেখালেখিতে স্যারকে (ওসি প্রদীপ) সহযোগীতা করেন।
খোকন চন্দ্র সরকার আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কি ছিলো লিখিত অভিযোগে এ বিষযে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতের বেলা ওই নারী কনস্টেবল কেন আদালতে আসলেন এবং কি করেছেন সে কথা লিখা ছিলো। অনৈতিক কিংবা আপত্তিকর অবস্থার কোন কথা লিখা ছিলো না বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, আমরা বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি কোর্টে সততার সাথে চাকরি কাজ করে শ্রেষ্ট অফিসার নির্বাচিত হয়েছি কয়েকবার। আশাকরি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আসল সত্যতা বেরিয়ে আসবে। আমি ন্যায় বিচার পাবো।
এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ থানার জিআরও শওকত আলী বলেন, আমি জেলা পুলিশে কাজ করি। মহানগর পুলিশের কোন বিষয় আমার জানা নেই। আমি কাউকে মোবাইল ফোনে ফোন করে কিছু বলি নাই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিয়ে আসা কনস্টেবল পিযুষ বলেন, স্যার (ওসি প্রদীপ) আমাকে ফোন করে তার কক্ষে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি আমাকে নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য বলেন। আমি তার কথায় নারী কনস্টেবলকে এগিয়ে দিয়ে আসি। ওই সময় কোর্টের সহকারী পুলিশ কমিশনার আমাদেরকে কোর্টের প্রধান ফটকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা তার কথা উত্তরও দেই।
নারী কনস্টেবলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।সুত্র-সিলেটভিউ