কমলগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান’র নামে সড়ক’র নামফলক সরিয়ে দেয়া হয়েছে : এলাকায় তীব্র ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ৭:৫৪ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলই চা বাগানে সামনে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মরণে স্মৃতিসৌধের সড়কের প্রবেশ পথে স্থাপিত নাম ফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন নাম ফলক স্থাপন করে পরিবর্তন করা হয়েছে সড়কের নাম। আর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের ফলকটি নতুন ফলকের নিচে ফেলে রাখায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতি বছরই ২৮ অক্টোবর হামিদুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, বিজিবি ব্যাটেলিয়ন কমান্ড তাঁর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন।
কমলগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, সড়কের তালিকায় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের নাম নেই। তাই তালিকা অনুযায়ী আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ধলইয়ে পাকিস্তানিরা ক্যাম্প তৈরি করে। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর রাতে ধলইয়ের যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে শত্রুর গুলিতে মারা যান তিনি। সহযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের মরদেহ সীমান্তের ওপারে নিয়ে ভারতের আমবাসা গ্রামের একটি মসজিদের পাশে দাফন করেন।
এই মহান বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ধলই চা বাগানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। সেই স্মৃতিসৌধের সড়করে নামকরণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়ক। কিন্তু নামফলকটি ভেঙে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে। তাতে নাম দেওয়া হয় ভানুগাছ জিসি ভায়া ইসলামপুর-মাধবপুর সড়ক। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস শহীদ।
এলাকাবাসী বলেন, এ জায়গায় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছিলেন আমরা জানতেও পারতাম না এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না হলে। আমরা শুধু বিভিন্ন দিবস এলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সম্মান করি। কিন্তু বাস্তবে এভাবে একজন বীরশ্রেষ্ঠের নামফলক ভেঙে পড়ে থাকলেও কেউ বিষয়টি দেখছেন না। এটি খুব দুঃখজনক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম আজ তাদের স্মৃতি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার জন্য গড়াগড়ি খাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম জানে না বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের আত্মত্যাগের ইতিহাস। তার নামে করা রাস্তার ফলকটি নতুন নামকরণের নিচে পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শিব নারায়ণ শীল বলেন, স্মৃতিসৌধে আসার রাস্তার নাম হামিদুর রহমান সড়ক বলেই আমরা সবাই জানি। কী কারণে এ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে তা জানি না। এ রাস্তার নাম বদল করায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকদের অসুবিধা হয়। তৃণমূলের একজন জনপ্রতিনিধির কথা কেবা শুনে। অনেক চেষ্টা করেও নামফলকের সংস্কার করতে পারি নাই।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এটা একটি গ্রামীণ সড়ক। প্রতিটি সড়কের নামের তালিকা আছে। আমার আগের তিন জন সাবেক উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি হামিদুর রহমান সড়ক বলে কোনো নাম নেই আমাদের তালিকায়।
তবে লোকমুখে শুনেছি এটা হামিদুর রহমান সড়ক। তাই আমরা আমাদের তালিকা অনুযায়ী এ রাস্তার নামকরণ করেছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানে উদ্যোগে একটি নামফলক লাগানো হয়েছিল। আমি স্থানীয় বীর মুক্তি যোদ্ধাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা যদি হামিদুর রহমানের নামে সড়কের নামকরণ দাবি করেন তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক আশেকুর রহমান বলেন, নামফলক ভাঙার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন অফিসিয়ালভাবে সেটা বদলানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।