এক হাতে সংসার, অন্য হাতে বই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:২৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারান রুপা রানী দে। এরপর তিন বোনের দায়িত্ব পড়ে চাচা-ফুফুর ওপর। এতেও ঘটে বিপত্তি। এক সময় সংসারে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন চাচাও অক্ষম হয়ে যান। সেই থেকে এক হাতে বই অন্য হাতে সংসারের হাল ধরেন ‘অদম্য’ রুপা।
রুপা রানী দে’র বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গা-মানিক গ্রামে। তার বাবা পরেশ চন্দ্র দে ও মা ঝর্ণা রানী দে। রুপা নড়িয়া সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভাব-অনটনের মধ্যেও তিনি এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় সুনামের সঙ্গে পাস করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০৯ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রুপার বাবা মারা যান। তিনি মেকানিক ছিলেন। ২০১৩ সালে একইভাবে মারা যান মা।
রুপা রানী দে বলেন, বাবা যখন মারা যান তখন চতুর্থ শ্রেণিতে ও মায়ের মৃত্যুর সময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন চাচা জগন্নাথ চন্দ্র দে ও ফুফু সুমিত্রা দে। তখন সংসারে আমরা তিন বোন, চাচা, ফুফু।
তিনি বলেন, আমি যখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ি তখন চাচা ও ফুফু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান। উপায়ন্তর না পেয়ে দুই বোন বন্যা রানী দে ও দীপা রানী দের পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ জোগাতে টিউশনি শুরু করি।
অদম্য রুপা বলেন, ২০১৯ সালে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের একটি প্রজেক্টে আট হাজার টাকা বেতনে কিশোর-কিশোরী জেন্ডার প্রমোটর হিসেবে চাকরি শুরু করি। সামান্য বেতনে পুরো সংসার সামলাতে চেষ্টা করি। ওই টাকায় দুই বোনের পড়াশোনা, সংসার খরচ, ঘর ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও আমার পড়াশোনার খরচ চলে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কথা চিন্তা করে চাচা-ফুফু বিয়ে করেননি। আমাদের তিন বোনকে লালন-পালন করে বড় করে তুলেছেন। চলতি বছরের ১৭ জুলাই চাচাও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
রুপা বলেন, বাবা-মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন আমাদের নিজস্ব ঘর, জমিসহ সবই ছিল। তারা মারা যাওয়ার পর জমি ও বাড়ি বেদখলে চলে গেছে। তাই ডিঙ্গামানিক গ্রামের কাদির শেখের বাড়িতে জরাজীর্ণ একটি ঘরে এক হাজার টাকায় ভাড়ায় থাকি। একটি চৌকিতে চারজনের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। আমাদের একটি ঘর খুবই প্রয়োজন। আমার বৃদ্ধা ফুফু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতাও পাচ্ছেন না।
সুমিত্রা দে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, তিন মেয়েকে ছোট রেখে আমার ভাই ও ভাবি মারা যান। আমি খুব কষ্ট করে ভাতিজিদের মানুষ করেছি। তাদের কথা চিন্তা করে বিয়েও করিনি। বয়স হয়েছে এখন আর কাজ করতে পারি না। কী আর করার সবই ভগবানের ইচ্ছা।
তিনি বলেন, আমাদের জমি নেই, ঘরও নেই। অন্যের জরাজীর্ণ একটি ঘরে ভাড়ায় থাকছি। কষ্টের জীবন আমাদের। সরকার বা কোনো বিত্তবান আমাদের একটি ঘর দিলে ভাতিজিদের নিয়ে বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিতাম।
স্থানীয় ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনির হোসেন সুমন বলেন, রুপার পরিবারের বিষয়টি আগে জানা ছিল না। শুনলাম পরিবারটি অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে। খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।
নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাকসুদা খাতুন বলেন, রুপা মেধাবী ছাত্রী। সামান্য চাকরির পাশাপাশি সংসার, বোনদের পড়াশোনা ও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। কলেজ থেকে যতটুকু সম্ভব ওকে সহযোগিতা করা হবে।