সিলেট ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জানুয়ারিতে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গেল অক্টোবর মাস ছিল সিলেটের রাজপথ উত্তাল। ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে শোডাউন রীতিমতো নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কমিটির বিদ্রোহীরা যেমন টায়ার জ্বালিয়ে আর সংবাদ সম্মেলন করে কমিটির বিরোধিতা করেছিলেন; ঠিক তেমনই তাদের পাল্টা জবাব দেওয়া হয় কমিটির পক্ষে আনন্দ মিছিলের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয় দীর্ঘদিন পর সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতাও ছিলেন ক্ষুব্ধ। যার অস্থিরতা ছড়িয়েছিল আওয়ামী লীগেও। বিষয়টি গড়িয়েছিল দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পর্যন্ত। পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করায় তারা দলীয় প্রধানের নজরে বিষয়টি এনেছিলেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসা নতুন নেতৃত্বের কাছ থেকে ফুল পর্যন্ত গ্রহণ করেননি আওয়ামী লীগ নেতারা। অবশ্য পরবর্তীতে সেই প্রেক্ষাপটও পাল্টে যায়। সকল ক্ষোভের অবসান ঘটিয়ে সিলেট ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে মাঠে নেমেছেন দায়িত্বশীল ছাত্রলীগ নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১২ অক্টোবর সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সিলেট জেলা কমিটিতে নাজমুল ইসলামকে সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক, মহানগরে কিশোয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান মুহিব, কনক পাল অরূপের নামও ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরই জাওয়াদ ও মুহিব নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে কেন্দ্রের দেওয়া পদ প্রত্যাখান করেন। এরপর শুরু হয় নানা জটিলতা। সিলেটজুড়ে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় মিছিল-সমাবেশ।
সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সবধরণের বাঁধা-বিপত্তি ও ক্ষোভের অবসান ঘটেছে। সকল শীর্ষ নেতাই তাদের মেনে নিয়েছেন। তারা সবাইকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করায় ছাত্রলীগসহ, আওয়ামী লীগেও ক্ষোভ ছিল। তা-ই দায়িত্বে আসার পর প্রথম দিকে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলরা দলীয় কাজে হোঁচট খেতে হয়। তারা বলেন, এখন সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে ছাত্রলীগ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলবে। তা-ই জানুয়ারি মাসে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরপর গঠন করা হবে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরআগে ছাত্রলীগ নেতাদের জীবনবৃত্তন্ত সংগ্রহ এবং তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই করা হবে। বিশেষ করে লক্ষ রাখা হবে-যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী জেলা ছাত্রলীগে স্থান না পায়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা, কলেজ ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধন্ত নিয়েছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। আর সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করে ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হলো-৬, ৯, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। পর্যায়ক্রমে নিষ্ক্রিয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি সকল ওয়ার্ডে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম জানান, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরপরই জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এরআগে ছাত্রলীগ নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ছাত্রলীগে ঠাঁই হবে না। যাচাই-বাছাই করে কমিটিতে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের জায়গা দেওয়া হবে। যাদের দ্বারা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে-বলে যোগ করেন তিনি।’
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ বলেন, মহানগর ছাত্রলীগকে আরো গতিশীল করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় ও মেয়াদোত্তকীর্ণ ৪টি ওয়ার্ড কমিটি আমরা ভেঙে দিয়েছি। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ইউনিয়র পরিষদ পরবর্তী সময়ের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার। এরআগে অবশ্যই পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হবে।’
তিনি আরও জানান, সিলেট ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ মনিটরিং করছে।সুত্র-সিলেটভিউ