সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে নৌকার ভরাডুবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১:২১ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ জেলার দু’টি উপজেলার ১৭টি ইউপির মধ্যে দু’টিতেই জয় পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বাকি ১৫টি ইউনিয়নই এবার হাতছাড়া হয়েছে। হবিগঞ্জের দু’টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ১৩টিতে জয়েরমুখ দেখেনি নৌকা প্রতীক। একই অবস্থা মৌলভীবাজারের দু’টি উপজেলায়ও। এখানকার ২৩টি ইউনয়নের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
সুনামগঞ্জর সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে জাপা, ৩টিতে বিএনপি, ২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ১টিতে জমিয়ত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেনে।
প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয়বারের মতো আব্দুল অদুদ (আনারস) ২৯৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আব্দুল মান্নান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ২২০৭ ভোট।
কুরবাননগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল বরকত (মোটরসাইকেল) ৩০৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শামস উদ্দিন (নৌকা) পেয়েছেন ২৯২১ ভোট।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী রশিদ আহমদ (লাঙ্গল) ৫৮৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল কাদির (আনারস) পেয়েছেন ৪৬৮১ ভোট।
সুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন রেজা (চশমা) ৫১৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মো. সিরাজুল ইসলাম (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৪৭১০ ভোট।
গৌরারং ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শওকত আলী (লাঙ্গল) ৬৯৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল ইসলাম (অটোরিকশা) পেয়েছেন ৪৮৬৭ ভোট।
রঙ্গারচর ইউনিয়নে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী দ্বিতীয়বারের মতো আব্দুল হাই (মোটরসাইকেল) ৪৬৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৪২০২ ভোট।
মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরুল হক (মোটরসাইকেল) ৩৪২৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সালাম (ঘোড়া) পেয়েছেন ৩১৯৯ ভোট।
মোহনপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাইনুল হক (মোটরসাইকেল) ৩১৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সীতেষ তালুকদার মঞ্জু (নৌকা) পেয়েছেন ২৯২১।
কাঠইর ইউনিয়নে জমিয়তুল উলামায়ে ইসলামের মনোনীত প্রার্থী শামসুল ইসলাম (খেজুর গাছ) ১৭৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির মো. ফারুক মিয়া (লাঙ্গল) পেয়েছেন ১৭৩৯ ভোট।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২টি, বিএনপি সমর্থিত ৩টি এবং ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়কলস ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল বাছিত সুজন(ঘোড়া), পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি) মাসুক মিয়া(আনারস) , পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জগলুল হায়দার(নৌকা) , পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী(বিএনপি) লুৎফর রহমান জায়গীরদার খোকন(চশমা), পাথারিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম(ঘোড়া) , শিমুলবাক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহিনুর রহমান শাহিন(আনারস) ও দরগাপাশা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী(বিএনপি) ছুফি মিয়া (চশমা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮ টা থেকে বিরতিহীনভাবে একযোগে ৪ পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে নৌকা, ১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বাকি তিন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
হবিগঞ্জ নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ১নং লোকড়া ইউনিয়নে মোটর সাইকেল প্রতীকে কাওসার আহমেদ শামীম, ২নং রিচি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে আব্দুর রহিম, ৩নং তেঘরিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে আব্দুল মোতালিব, ৪নং পইল ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে সৈয়দ মঈনুল হাসান আরিফ, ৫নং গোপায়া ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে আব্দুল মন্নান, ৬নং রাজিউড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে বদরুল আলম দুলাল, ৯নং নিজামপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে (বিদ্রোহী) তাজ উদ্দিন আহমেদ তাজ ও ১০নং লস্করপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে মাহবুবুর রহমান হিরু জয়ী হয়েছেন। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১নং বড় ভাকৈর(পঞ্চিম) ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রঙ্গ লাল দাশ ঘোড়া প্রতীকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী সমর দাশ।
২নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্তার হোসেন নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেহের আলী মালদার।
৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকার লজ্জাজনক হার হয়েছে বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নোমান হোসেন ৬১০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নৌকার এসএম আব্দুস সবুর ৪১৭, বিদ্রোহী আলাউদ্দিন ২২০৯ এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সামাউল ইসলাম পেয়েছেন ৩৯৮ ভোট।
৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আব্দুল ছালিক আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রার্থী আবু সাঈদ এওলা।
৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোফাজ্জল হক।
৬নং কুর্শি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ খালেদুর রহমান চৌধুরী আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মুকিত।
৭নং করগাঁও ইউনয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিমললেন্দু দাশ রানা ঘোড়া প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছাইম উদ্দিন।
৮নং সদর ইউনিয়নে নৌকার হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জাবেদুল ইসলাম চৌধুরী সাজু।
৯নং বাউসা ইউনয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিকুল ইসলাম শিশু আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামিলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী।
১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে সতন্ত্র প্রার্থী শাহরিয়াজ নাদির সুমন চশমা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন।নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি নৌকার প্রার্থী আব্দুল মোহিত চৌধুরী।
১১নং গজনাইপুর ইউনয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুর রহমান মুকুল আনারস প্রতীকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিউল আলম।
১২ নং কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
১৩নং পানিউন্দা ইউনয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইজাজুর রহমান নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল হাসান মামুন।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ৪ প্রার্থী, আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী ৪, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ৩ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ নির্বাচিত হয়েছেন।