সিলেটে প্রাণ ফিরছে পর্যটনে, খরা কাটছে ব্যবসায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দীর্ঘদিন পর ফের প্রাণ ফিরেছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সম্ভাবনাময় খাতটি।দুর্দিন কাটছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ও।সবখানেই চাঙাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।অথচ করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে ন্যায় গভীর সংকটে পড়েছিল সিলেটের পর্যটনশিল্পও। প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অচলাবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে সম্ভাবনাময় এই খাত। মানুষের আয় কমে যাওয়া, প্রণোদনা নিয়ে জটিলতাসহ নানা কারণে এই খাতের পুনর্জাগরণ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন উদ্যোক্তারা।
তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটনশিল্প। সরকারি প্রণোদনা কিংবা বড় বড় বিনিয়োগ নয়, বরং সাধারণ পর্যটকরাই চাঙা করে তুলছেন এই খাত। করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলোয় উপচে পড়া ভিড়।
পর্যটকদের কাছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা সিলেট। এই বিভাগের চার জেলায়ই সারা বছরই পর্যটক সমাগম লেগে থাকে। তবে করোনার বিধিনিষেধ ওঠার পর পর্যটকদের ঢল আরও বেড়েছে। ঘরবন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ দীর্ঘদিন পর মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছেন।
পর্যটক ফেরায় এই খাতসংশ্লিষ্টদের মুখে হাসিও ফিরেছে। টাঙ্গুয়ার নৌকাচালক, জাফলংয়ের ফটোগ্রাফার, বিছনাকান্দির প্রসাধনসামগ্রী বিক্রেতা থেকে শুরু করে বড় রিসোর্টের উদ্যোক্তারাও এখন দুর্দিন কাটিয়ে উঠছেন। তবে সব জায়গাতেই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। উপেক্ষিত থাকছে পরিবেশের সুরক্ষাও।
অবাধে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। বেশির ভাগই পরছেন না মাস্ক। আবার বন-হাওর-নদী-সমুদ্রে দল বেঁধে হইহুল্লোড় করে, শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে গান বাজিয়ে আর ময়লা-আবর্জনা ফেলে পর্যটকরা নষ্ট করছেন পরিবেশ। ফলে করোনাকালীন পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পরিবেশের উন্নতি হলেও বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর তা আবার হুমকিতে পড়েছে।
এমনিতেই পাহাড়-টিলা, ঝরনা-ছড়া, হাওর-বাঁওড় আর সবুজের প্রাচুর্যে ভরা সিলেট। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ বিভাগে ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা পাথুরে নদী, বন, চা-বাগান; কী নেই এখানে। বৈচিত্র্যে ভরা সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। সারা বছরই পর্যটনকেন্দ্রে থাকে উপচে পড়া ভিড়। তবে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল পর্যটন খাত। অথচ বাংলাদেশের দ্রুতবর্ধনশীল পর্যটন মার্কেটের মধ্যে সিলেট অন্যতম। তবে আশার কথা হচ্ছে, কয়েক মাস ধরে আবারও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
এখানকার হাওর, ঝরনা, পাথুরে নদী আর জলার বন বর্ষাকালেই দেখা দেয় সবচেয়ে মনমুগ্ধকর রূপে। বর্ষায় সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানগুলো হয়ে ওঠে আরও সজীব। তবে এবার বর্ষার প্রায় পুরোটা কেটেছে ঘরবন্দি হয়ে করোনার বিধিনিষেধে।
এখন পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, মায়াবী ঝরনা, জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, শাপলা বিল, রাজবাড়ি ও শ্রীপুর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর, কানাইঘাটের লোভাছড়া ও নগরীর চা-বাগানগুলোতে প্রতিদিনই পর্যটকদের সমাগম হচ্ছে। বিশেষত শুক্র ও শনিবার পর্যটকের ভিড়ে এসব স্থান মুখর হয়ে উঠছে।
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, বড়লেখার মাধবকুণ্ড, কমলগঞ্জের হামহাম জলপ্রপাত, হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানেও বিধিনিষেধ ওঠার পর থেকে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। বিশেষত শ্রীমঙ্গলে পর্যটক সমাগম হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ছুটির দিনগুলো ছাড়াও অন্যান্য দিনেও এই উপজেলার হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ খালি মিলছে না।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ও বিকেলে রাতারগুল গিয়ে দেখা যায়, দুই জায়গায়ই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পাহাড় থেকে নেমে আসা বিছনাকান্দির পাথুরে নদীতে গা ভেজাচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। আবার রাতারগুলে গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় চড়ে এই জলার বন ঘুরে দেখছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।পর্যটকদের আগমনে সিলেট জেলার কেন্দ্রগুলো মুখর হওয়ায় পর্যটন ব্যবসাও চাঙা হতে শুরু করেছে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরু থেকে পর্যটকের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দলে দলে এসে পর্যটকেরা ভিড় করছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট মন্দার ক্ষতি কাটিয়ে লাভজনক হবে জেলার পর্যটন ব্যবসা।
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালে বন্ধ ছিল আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁ। পরে লকডাউন উঠে গেলেও পর্যটকেরা না আসায় এ দুটি খাতের ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন যাপন করেছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য না ফিরলেও এখন পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। ফলে আবাসিক হোটেল আর রেস্তোরাঁয় ব্যবসাও ক্রমশ জমজমাট হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা জানিয়েছে, সিলেট নগরীতে প্রায় সাড়ে ৩০০ এবং জেলায় ৭০০ রেস্তোরাঁ রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁয় ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকায় অনেকেই কাজ হারিয়েছিলেন। তবে এখন রেস্তোরাঁগুলো আবার জমজমাট হতে শুরু করেছে। কাজ হারানো শ্রমিকেরাও কাজে ফিরেছেন।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, আগে গ্রুপ ট্যুরে অনেকেই সিলেটে আসতেন। এটা এখন কমে গেছে। অনেকে আগে ছুটি পেলেই দুই থেকে তিন দিন থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে বেড়াতে আসতেন। এখন ডেইলি বেইজড ট্যুর বেড়ে গেছে। ফলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা আগে যাঁদের কাছ থেকে তিন দিন নানা ধরনের ব্যবসা করতে পারতেন, এখন সেটা এক দিনে নেমেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণেই এমন হয়েছে। এরপরও কিছু কিছু পর্যটক যে আসছেন, সেটাই মন্দ কী?
নগরীর কয়েকটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক মাস আগেও দুপুর কিংবা রাতের মতো ব্যস্ত সময়ে আসন ফাঁকা থাকলে এখন মানুষের ভিড়।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার এবং শ্রীশ্রীচৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটা সিলেটে হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সিলেটে আসেন। এ সময় সিলেটের হোটেল-রিসোর্টগুলো জমজমাট থাকত। একই সঙ্গে রেস্তোরাঁ ব্যবসাও ভালো হতো। করোনাকালে এসব ব্যবসায় ধস নেমেছে। এ ছাড়া সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রের অনেকগুলোতে নৌকায় করে যেতে হয়। পর্যটক না আসায় এসব পর্যটনকেন্দ্রিক কয়েক হাজার নৌশ্রমিককে দীর্ঘদিন বেকার হয়ে অমানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে।
একই সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের চার জেলায় শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এসব পর্যটনকেন্দ্রে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আসেন ১২ থেকে ১৩ লাখ। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে প্রায় ৫ লাখ করে ১০ লাখ এবং হবিগঞ্জে প্রায় ২ লাখ পর্যটক আসেন। তবে করোনা পরিস্থিতির পর গ্রুপ ও করপোরেট ট্যুর কমে গেছে। তবে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ট্যুর আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। এর ফলে আগের মতো না হলেও পর্যটকদের কেনাকাটার তালিকায় থাকা মণিপুরি পোশাক, চা-পাতা, সাতকরাসহ স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বেচাকেনাও কিছুটা বেড়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক ও হোটেল সিলেট ইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী জানান, সিলেট নগরে দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর বাইরে শহরতলি ও পর্যটনকেন্দ্রিক কিছু উপজেলায় বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। গত বছরের ২৬ মার্চের পর থেকে কমবেশি পাঁচ থেকে ছয় মাস হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ ছিল। এরপর এসব চালু হলেও মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা আসতেন না। তবে কয়েক মাস ধরে আবার পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পর্যটন ব্যবসার মন্দা কেটে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার ব্রিটানিয়া হোটেল অ্যান্ড পার্টি সেন্টারের কর্মকর্তা কাওসার চৌধুরী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন মাস হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বড় অঙ্কের ক্ষতি গুনতে হয়েছে। এখন পুরোদমে চালু রয়েছে। অতিথিরাও আসছেন। এখন ছুটির দিনগুলোতে হোটেলে কক্ষ খালি থাকে না।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্রিক দুটি বিষয় রয়েছে। একটি ধর্মীয় ট্যুরিজম, অন্যটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেন্দ্রিক ট্যুরিজম। এ দুটি কারণে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ সিলেটে আসেন। তবে কোভিডের কারণে গত বছরের মার্চের শেষ দিক থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফাঁকা হতে থাকে। পরে সরকারি নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। লকডাউনের পর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। মানুষজনও দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকার পর মানসিক অবসাদ দূর করতে আবার প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় আগের মতো না হলেও আবার পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে।
আবু তাহের মো. শোয়েব আরও বলেন, করোনাভাইরাস-পূর্ববর্তী সময়ে কেবল সিলেট জেলাতেই পর্যটনকেন্দ্রিক খাতে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টাকা আয় হতো। সিলেট বিভাগের অপর তিন জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের হিসাব ধরলে সে আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হবে বলে তাঁদের ধারণা। পর্যটন খাতটি বৃহত্তর সিলেটের ব্যবসায়ীদের জন্য অপার সম্ভাবনার খাত হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সবাইকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এখন যেহেতু পর্যটকেরা আবার ভ্রমণে আসছেন, তাই পর্যটন-সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের মনে আশা জেগেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিছনাকান্দিতে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অমিত রায়হান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ঘরে আটকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এখন পর্যটনকেন্দ্র খোলায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। তাই সুযোগ পেয়েই ছুটে এসেছি।’রাতারগুলের নৌকাচালক সামছু মিয়া। সাহের বাজার থেকে নৌকায় করে পর্যটকদের রাতারগুল জলার বন ঘুরিয়ে আনেন তিনি।
সামছু মিয়া বলেন, ‘অনেক দিন পর আবার পর্যটকরা এখানে আসা শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর আবার কাজ শুরু করেছি।’
ছুটির দিনগুলোতে রাতারগুলে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক সমাগম হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ রকম দিনে আমি প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা রোজগার করতে পারি। তবে টাকার বেশির ভাগ অংশই ঘাটের ইজারাদারকে দিয়ে দিতে হয়।’
লাক্কাতুরায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের টাকার বিনিময়ে ছবি তুলে দেন সুয়েব আহমদ। তিনি বলেন, এখন মাসখানেক ধরে মানুষজন আসছে।তার আক্ষেপ, সবার হাতে স্মার্টফোন থাকায় এখন লোকজন আগের মতো ছবি তোলাতে চায় না।পর্যটক সমাগম বাড়ায় প্রায় দেড় বছর পর ব্যবসা চাঙা হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হিমাচল রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সাজু আহমদ।
তিনি বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পুষিয়ে নেয়ার নয়। তবে এখন প্রচুর লোকজন ঘুরতে আসছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও পর্যটকদের কারণে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি।’
তবে পর্যটক সমাগম বাড়ার পেছনে ভিন্ন এক যুক্তি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সহসভাপতি ও হোটেল নির্ভানা ইন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহমিন আহমদ। তিনি বলেন, ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় এখন দেশের ভেতরেই ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে অনেককে।
তার দাবি, আগে পর্যটকরা সিলেটে এসে থাকতেন না। সিলেট হয়ে ভারতের মেঘালয়ে চলে যেতেন। এখন ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারছেন না। ফলে দেশের ভেতরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।দুই সপ্তাহ ধরে জাফলংয়ে পর্যটক সমাগম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব-জোনের পরিদর্শক মো. রতন শেখ। তিনি বলেন, ‘জাফলংয়ে এখন প্রচুর পর্যটকরা আসছেন। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমরা সহযোগিতা করছি।’
সিলেট বিভাগে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পর্যটকনির্ভর। করোনার সময়ে একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছিল এসব হোটেল-রিসোর্ট। তবে এখন আবার অতিথিরা আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল।
তবে ব্যবসা এখনও আগের অবস্থানে ফেরেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে এখন যারা বেড়াতে আসছেন, তারা কম খরচে থাকতে চাচ্ছেন। এতে করে একটু ভালো মানের হোটেলগুলোতে অতিথি কম আসছেন। তাদের বিভিন্ন ছাড় দিয়ে অতিথি আকর্ষণ করতে হচ্ছে।’
এদিকে পর্যটন এলাকায় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। উপেক্ষিত থাকছে পরিবেশের সুরক্ষাও।অবাধে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।বেশির ভাগই পরছেন না মাস্ক।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো আবার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। তবে সবাইকেই পরিবেশের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রশাসনের তরফ থেকেও এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি থাকবে।