সিলেটে রিয়া ও আঁখির প্রতারণার ফাঁদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
রিয়া ও আঁখি নামের দুই তরুণী। ফেসবুকে নানান ভঙ্গির ছবি দিয়ে যুবকদের নজর কাড়ে। এরপর গড়ে তোলে সংখ্য। একপর্যায়ে ডেকে নেয় তাদের বাসায়। এতে কাবু হয়ে পড়েন যুবকরা। কখনো রিয়া, আবার কখনো আঁখি ওই যুবকদের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবি তোলে। দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা। দাবিমতো কিছুই না পেলে ওই যুবকের মোবাইল, টাকা-পয়সা রেখে ছেড়ে দেয়।
সিলেট নগরীর খাসদবির ও সুবিদবাজার এলাকায় এভাবেই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছিল সিলেটের আঁখি ও রিয়া। আর এই ফাঁদে অনেক যুবক নিঃস্ব হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে জকিগঞ্জের এক যুবককে এমনিভাবে ডেকে নিয়ে এসে রিয়ার খাসদবিরের বাসায় প্রতারণা করা হয়েছিল। ওই যুবকের কাছ থেকে প্রায় লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওই যুবক পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও বাসার লোকেশন সঠিক না থাকায় রিয়া ও আঁখিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু এবার আর রক্ষা হয়নি রিয়া ও আঁখির। গত সপ্তাহে একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন জগন্নাথপুর এলাকার এক যুবক। স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওই যুবককে নিঃস্ব করে দিয়েছে রিয়া ও আঁখি। পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আঁখি ও রিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর বেরিয়ে এসেছে তাদের অজানা কাহিনীও। পুলিশ মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আদালতের মাধ্যমে রিয়া ও আঁখিকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। রিয়া বেগম। বয়স ২৪-২৫ বছর হবে। ময়মনসিংহের নান্দাইলের কৃষ্ণপুরের হেলাল উদ্দিনের মেয়ে সে। আর আঁখির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয় নগরের মহাদেবপুরে। পিতার নাম কছির মিয়া। রিয়া বসবাস করে নগরীর খাসদবিরে আর আঁখি তার স্বামী রমজানকে নিয়ে বসবাস করে সুবিদবাজারে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী যুবকরা জানিয়েছেন- আঁখির স্বামী রমজান ও তার বন্ধু গোবিন্দগঞ্জের জুবেলের নেতৃত্বে রিয়া ও আঁখিকে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়। তারা ফেসবুক, ইমো, হোয়াট্সঅ্যাপ সহ বিভিন্ন গ্রুপ খুলে ছেলেদের ফাঁদে ফেলতো। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাবার্তা বলে ডাকা হতো রিয়া কিংবা আঁখির বাসায়। সেখানে যুবকরা আসা মাত্র কখনো রিয়া, আবার আঁখি তাদের উলঙ্গ করে অশ্লীল ডুয়েল ছবি তুলতো। এবং এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা পুলিশে মামলা করার হুমকি দেওয়া হতো। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে রহমান ও জুবেল। অশ্লীল ছবি তোলার পর তারাই যুবকদের দিয়ে নাটক শুরু করতো। বেশির ভাগ সময় রাতের বেলা তারা যুবকদের ডেকে আনতো। এ কারণে অনেক যুবকই পরবর্তীতে তাদের বাসা ও ঠিকানা চিহ্নিত করতে পারতেন না। পুলিশ জানায়- জগন্নাথপুরের এক যুবক গত সপ্তাহে তাদের প্রতারণার জালে আটকা পড়েন। এরপর ওই যুবকের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া ছাড়াও মুক্তিপণ হিসেবে টাকা চাওয়া হয়। পরে কৌশলে ওই যুবক তাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে এসে বিমানবন্দর থানা পুলিশকে অবগত করেন। থানার ওসি খান মো. মাইনুল জাকিরের নির্দেশে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মফিজুর রহমান ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করেন। এতে সত্যতা পাওয়ায় মঙ্গলবার রাতে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। রাতেই পুলিশ খাসদবিরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এরপর রিয়ার তথ্যমতে পুলিশ সুবিদবাজার থেকে আঁখিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়া ও আঁখি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তারা দু’জনই নুসরাত জাহান সহ কয়েকটি নামে ভুয়া আইডি খোলে। এরপর এসব আইডি থেকে তারা সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার যুবকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এরপর তারা বাসায় ডেকে নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতো। ঘটনার মূল নায়ক হচ্ছে আঁখির স্বামী রমজান। গত দুই বছর ধরে সিলেটে রমজানের নেতৃত্বে তারা এই ধান্ধা করছে। আর এতে সহযোগিতা করতো গোবিন্দগঞ্জের জুবেল। সে কখনো আঁখি, আবার কখনো রিয়ার বাসায় বসবাস করতো। তারা প্রতি সপ্তাহেই দু’-একটি ঘটনা ঘটাতো। প্রতারণার শিকার ছেলে অচেনা তরুণীর সঙ্গে নগ্ন ছবি তোলার পর কাবু হয়ে যেতো। আর কথামতো টাকাও দিতো। এদিকে- পুলিশের হাতে রিয়া ও আঁখি গ্রেপ্তার হলেও পালিয়েছে রমজান ও জুবেল। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মফিজুর রহমান জানিয়েছেন- ‘রিয়া ও আঁখিকে দিয়ে রমজান, জুবেল মিলে ব্ল্যাকমেইল করতো। তাদের ৫ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন মূল হোতা রমজান ও জুবেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন- ‘ফেসবুকের মাধ্যমে তারা প্রতারণা করতো। এতে যুবকরা প্রতারিত হতেন। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। তাদের সঙ্গে অন্য কোনো সিন্ডিকেটের সম্পর্ক রয়েছে কি না- সেটিও খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তিনি।’