এ কী কথা রাবেলের মুখে?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১১:৫০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী হয়ে ভোটে পাস করেছেন। দলের পরিচয় তাই তার কাছে খুব একটা পাত্তা পাওয়ার কথা নয়। হয়েছেও এমনটিই। নিজেকে যে আদর্শের সৈনিক বলে পরিচয় দেন বিষোদ্গার করেছেন সেই আদর্শের রাজনীতিবিদদের প্রতি। শুধু তাই নয় ‘বাংলাদেশি মানসিকতা’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রবাসী রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন দেশের রাজনীতিবিদদের।
তার ভাষ্যে, দেশের মানুষের চরিত্র ঠিক হয়নি। তার বক্তব্য মন্ত্রী-সচিবদের ঘুষ না দিলে বরাদ্দ পাওয়া যায় না। দেশের বাইরে এক অনুষ্ঠানে দেশের মানুষ ও রাজনীতিবিদ ও প্রশাসন নিয়ে এমন নেতিবাচক কথা বেরিয়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলের মুখ থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।
পাঠক চলুন রাবেলের জবানেই শুনে নিই তার বক্তব্য। সম্প্রতি লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ওই বক্তব্যে দলের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান প্রসঙ্গে রাবেলের ভাষ্য, নৌকার বিরুদ্ধে আমি দুইবার পাস করেছি। আসলে এখনো বাংলাদেশে ভালো মানুষ আছে। আপনি যদি কাজ করেন, আপনার দায়িত্ব যদি আপনি পালন করতে পারেন, তাহলে মানুষ অবশ্যই আপনাকে ভোট দিবে। এই আস্থা, এই বিশ্বাস মানুষের কাছ থেকে অর্জন করতে হবে। তো, আমি একবার ছিলাম, অর্জন করেছি, আবার দাঁড়িয়েছি। যেবার দাঁড়িয়েছি সেবার বাংলাদেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৮১টিতে নির্বাাচন ছিলো। আপনারা বুঝতেই পারছেন দেশের ইলেকশন, যে (দলীয়) প্রতীক পাবে, জোর করে যেভাবেই হোক পাস করিয়ে আনতেই হবে। ইনশাআল্লাহ এর মধ্যেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে (নির্বাচিত করেছেন), আমি নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ ভোট বেশি পেয়ে পাস করেছি।
আমিনুল ইসলাম রাবেল তার বক্তব্যে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও। অথচ নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবেই পরিচয় দেন রাবেল। রাবেলের বক্তব্যের অংশ ঠিক এমনই- বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী মিনিস্টার অতিথি হিসেবে আসেন, আজকে আমিও এসেছি। আমরা এসে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলি। কিন্তু বাংলাদেশে গিয়ে এই কথাগুলো ভুলে যাই। তার চাক্ষুষ প্রমাণ আমি। আমি যখন প্রথম ইলেকশন করলাম, ঢাকায় গেলাম। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে গিয়ে আমার সাক্ষাত দিতে হয়েছে। যখন আমি বললাম আমি একজন প্রবাসী।
তিনি বলেন, ‘না না না না, তুমি প্রবাসী আছো, প্রবাসে যাও। এখানে বাংলাদেশে যারা মানুষ আছে, তারা রাজনীতি করবে।’ আমি উনাকে সামনাসামনিই চ্যালেঞ্জ করে এসেছিলাম যে, আপনি যে ক্যান্ডিডেট দেবেন (নৌকা প্রতীকে), আমি (তার চেয়ে বেশি ভোটে) পাশ করব। আপনার বাংলাদেশি ক্যান্ডিডেট তো পাশ করবে না। তিনি বলেন, ‘তারপরও তোমাকে দেবো না।’ আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।
আমিনুল ইসলাম রাবেল মনে করেন, দেশে থাকা মানুষ আর প্রবাসীদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তিনি তার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন এভাবেই- আমি প্রথম ইলেকশনে মানুষকে এটাই বলেছি যে, ‘বিদেশি’ আর বাংলাদেশি, একটা বার ভোট দিয়ে দেখো। এখানে পার্থক্য আছে। বাঙালি যারা বংলাদেশে আছে তারা এবং প্রবাসী, এখানে বিরাট একটা গ্যাপ আছে। ২১ বছর যুক্তরাজ্যে প্রবাসী হিসেবে থাকায় নিজেকে দেশের মানুষজন থেকে আলাদাই ভাবছেন রাবেল। তিনি তার বক্তব্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন দেশের মানুষের মানসিকতাকেও। তার বক্তব্য- আমরা প্রবাসী ছিলাম দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের ওই মনমানসিকতা আমাদের নেই, এজন্য কাজ করতে পারছি।
আমিনুল ইসলাম রাবেল আক্রমণের তীর ছুড়েছেন বাংলাদশের প্রশাসনের দিকেও। রাবেলের বয়ানে এভাবেই বলা হয়েছে- দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি চলছে, প্রচুর। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি আছি, আমরা তো ফান্ড আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই, সচিবের সাথে মিটিং করি, এলজিইডি মন্ত্রীর সাথে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। সেখানে বিরাট একটা পর্সেন্টেজ দিয়ে ফান্ড আনতে হয়। আপনি এক’শ কোটি টাকার একটা ফান্ড আনলেন। এর ৫ পার্সেন্ট দিয়ে আসতে হয় (মন্ত্রণালয়ে)।
রাবেল কি অসতর্ক হয়ে এমন বক্তব্য রাখছিলেন? পাঠক এমন প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন তার বক্তব্য থেকেই। রাবেল যখন বক্তব্য রাখছিলেন তাকে সতর্ক করে দেন সেখানে বসা অন্যরা, বলেন লাইভ চলছে। তখন পৌর মেয়র রাবেল বলেন, না, না, এসব কথা শোনার প্রয়োজন আছে আপনাদের। এ কথাগুলো বাস্তব। আমি এক সপ্তাহ আগে এসেছি। আরো এক সপ্তাহ আগে মন্ত্রণালয় থেকে দশ কোটি টাকার ফান্ড আসছে। সেখানে তিনজন মন্ত্রী এবং তিনজন সচিবের একটা গ্রæপ আছে। ওই দশ কোটি টাকা থেকে তাদেরকে ৫ পার্সেন্ট দিয়ে ফান্ড আনতে হয়েছে। ৫% দিয়ে আসছি মানে তাদেরকে ৪০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এই ৪০ লাখ টাকা আপনি বের করবেন কোত্থেকে। তখন আপনিও চোর হবেন। মন্ত্রণালয়ে যত বেশি পার্সেন্টেজ দিবেন, তত বেশি ফান্ড আসবে।
আমিনুল ইসলাম রাবেল টানা দুই দফা সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই বারেরই তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। পৌর মেয়র সিরাজুল জব্বারের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মো. রুহেল আহমদ।সুত্র-একাত্তরের কথা