রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে বাঁশঝাড়ে থাকেন মা, ছেলেরা দালানে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ৭৫ বছর বয়সী ছায়রন বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর ছয় সন্তানকে ঘরে রেখে কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। নিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেললেও সন্তানদের কষ্ট দেননি। তীলে তীরে গড়ে তুলেছেন সন্তানদের। তারা এখন সাবলম্বী। থাকে পাকা-আধা পাকা বাড়িতে। কিন্তু ঠাঁই মেলেনি মায়ের। ছায়রন বেগমের ঠিকানা হয়েছে গবাদিপশু কিংবা মানুষের মলমূত্রের মধ্যে একটি ঝুপড়িতে।
পাঁচ বছর ধরে ঝুপড়িতে অমানবিক জীবনযাপন করছেন ছায়রন বেগম। এমন খবরে তাকে উদ্ধার করে সন্তানদের ঘরে তুলে দিলেন যশোরের চৌগাছার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির। এ সময় তাকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে দুটি কম্বল, চাল, ডাল আলুসহ খাবার নিয়ে বেগমের বাড়িতে হাজির হন ছায়রন চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাফী বিন কবির ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ। সেখানে বৃদ্ধাকে চেয়ারে বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাঠের পিঁড়িতে বসেন। এরপর তার কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। এরপর বৃদ্ধার বড় ছেলের পাকা ঘরের বারান্দায় তুলে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসার খবর পেয়েই বাড়িতে তালা দিয়ে সরে যান পুত্রবধূরা। আগে থেকেই মাঠে কাজ করায় বাড়িতে ছিলেন না বৃদ্ধার ছেলেরা। এ সময় কাফী বিন কবির ছেলেদের বিচার করার কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। ইউএনওর হাত জড়িয়ে ধরে বলেন তাদের ধরতে হবে না। তারা খেটে খাচ্ছে। তাদের কিছু বলবেন না। পরে বৃদ্ধার তিন ছেলেকে দুদিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন।
বৃদ্ধা ছায়রন বলেন, সকালে আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদরাসার সুপার আম্মাদুল। সেই খাবার ছাড়া দুপুর পর্যন্ত আর কিছু খাইনি। আমাকে ছেলে ও পুত্রবধূরা বাড়িতেই যেতে দেয় না। মাঝে মধ্যে খাবার দিয়ে যায়। বিষয়টি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জানলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।
প্রতিবেশী আয়েশা খাতুন বলেন, ঝুপড়িটি বৃদ্ধার নিজের কাজ করে জমানো টাকার। সেখান থেকেও টাকা নিয়েছেন ছেলেরা। দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধা রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে এ বাঁশ বাগানেই থাকেন। ছেলে পুত্রবধূরা চোখের দেখাও দেখতে আসেন না। পাশের জগদীশপুর গ্রামের এক নারী এবং গ্রামের কিছু মানুষ মাঝে মধ্যে তার কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করে দেন।
গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আম্মাদুল ইসলাম বলেন, মাকে খাবার দেওয়া বা ঘরে রাখার মতো সক্ষমতা ছেলেদের আছে। তার ছেলে ও নাতি যারা আছে তারা প্রত্যেকে একদিন করে খেতে দিলেও এক সপ্তাহ হয়ে যায়। তবে তাদের বারবার বললেও কারো কথা শোনেন না।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন, খুবই অমানবিক ঘটনা। খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর বাঁশঝাড়ের পাশে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে ঝুঁপড়ি ঘর থেকে ওই মাকে উদ্ধার করে গোসল করিয়েছি। পরে তার বড় সন্তানের ঘরে তুলে দিয়েছি। আমরা তাকে খাবার, হাত খরচের টাকা ও দুটি কম্বল দিয়েছি। তার ছেলেদের বাড়িতে পাইনি। আমার অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।