গোলাপগঞ্জে মেয়র রাবেলের ভাইরাল বক্তব্যে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল। এক সময় ছিলেন লন্ডন যুবলীগ নেতা। সেখান থেকে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন । এরপর গত বছরের নির্বাচনে তিনি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর করছেন মেয়র রাবেল। সেখানে তিনি এক অনুষ্ঠানে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বরাদ্দের কথা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী এবং মন্ত্রী-সচিবদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়। নানা সমালোচনা, আলোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি।
তার এই বক্তব্যে ক্ষেপেছেন নিজ দল আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলররাও। গত বুধবার রাতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেলেপমেন্ট কাউন্সিল এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটের স্পিকারও। অনুষ্ঠানে মেয়র রাবেল বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইলেকশনগুলো হচ্ছে, সেখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে দু’বারই পাস করেছি। আমি একবার মেয়র ছিলাম বলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। পরের বার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আপনারা জানেন নির্বাচনে যে দলীয় প্রতীক পাবেন তাকে পাস করাতেই হবে। এর মাঝেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। একজন প্রবাসী হিসেবে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি প্রবাসীদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে কাজ করছি।’ গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে মেয়র রাবেল জানান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন আমি সেভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসী থাকায় বাংলাদেশের মতো মন-মানসিকতার নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে রাবেল অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম আমি একজন প্রবাসী নির্বাচন করবো। কিন্তু তিনি দেননি। ‘প্রবাসে যাও’- বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম- আপনারা যে প্রার্থীই দেন; আমি পাস করবো। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাস করাতে পারবেন না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।’ দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি কমছে না- এমন বক্তব্যে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক- এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টিজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তব দিক। একটি বরাদ্দ তিনি ৫ পার্সেন্ট টাকা দিয়ে আনতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।’ মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলের বক্তব্য গতকাল শুক্রবার এলাকায় ভাইরাল হয়েছে। তার বক্তব্য নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনাও। রাবেল ছিলেন গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিদ্রোহী হয়ে প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার এই বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন পৌরসভার কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রুহিন আহমদ খান।
তিনি জানিয়েছেন, ‘মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল তার তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টাকার কথা উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি সত্য নয়। আর পার্সেন্টেজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয় সেটি আমরা অতীতে কখনো শুনিনি। একজন জনপ্রতিনিধির বক্তব্য আরও পরিশীলিত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।’ তিনি জানান, ‘তার এই বক্তব্য এলাকায় ভাইরাল হওয়ার পর নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া আহমদ পাপলু জানিয়েছেন, ‘মন্ত্রী ও সচিবদের পার্সেন্টেজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয় এটা প্রথম শুনলাম। আমি দীর্ঘদিন মেয়র ছিলাম। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘মেয়র বলেছেন ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ তিনি করিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তো কাজ দৃশ্যমান নেই। আমি মেয়র থাকাকালে যে লাইটিং করে এসেছিলাম সেভাবেই ৯ ওয়ার্ডে লাইটিং রয়েছে।’
পাপলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ও এলজিইডি মন্ত্রী এবং সচিবদের নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি শিষ্টাচার বহির্ভূত। লন্ডনে গিয়ে তিনি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এমন দুর্নাম রটাবেন- সেটিও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’