শ্রীমঙ্গলে শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে তীব্র উত্তেজনা : দুই মেয়র প্রার্থী পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১০:৫২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র বর্তমান মেয়র বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধুর বাসায় হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠেছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় ৮ জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিপক্ষের দাবি। এ ঘটনায় দুই মেয়র প্রার্থী পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে একে অন্যকে দায়ী করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, পৌর শহরের ডাক বাংলো পুকুরপাড় এলাকায় শ্রীমঙ্গলের বর্তমান মেয়র ও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধুর বাসভবনে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১২টার ৪৫ মিনিটের সময় হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন। হামলায় গুরুতর আহতরা হলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধুর ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন (২৫), ভাতিজা মোশারফ হোসেন রাজ (২৩), সমর্থক খাইরুল বাশার (৩৫) ও মানিক মিয়া (৩২)। তার মধ্যে তার মোশারফ হোসেন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরদিকে একই ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হকের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহকারি দপ্তর সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন রাহিদ ও আনোয়ার হোসেন তামীমসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুই পক্ষের সহিংসতার ঘটনায় ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ এনে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ২টার পর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধু তাঁর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাসায় রাতে কোনও উস্কানি ছাড়াই হামলা হয়। এর জন্য তিনি আওয়ামীলীগের একটি অংশকে দায়ী করে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র প্রার্থীর মদদে তার বাসভবনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা করে ।
মহসিন মিয়া মধু অভিযোগ করেন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান আওয়ামী প্রার্থীর আত্মীয়তার সুবাধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তা বানচালের চেষ্টা করছেন। তিনি প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়ে বলেন জনগণ তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
অন্যদিকে, শুক্রবার বিকেল ৪টার পর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক তার গুহ রোডের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। তিনি জানান, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ইভিএমে ভোট হবে জেনে নাটক করছেন।
তিনি দাবি করেন ওইদিন রাতে ডাকবাংলো এলাকার মধুর বাসা ভবনে সামন থেকে তার দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা এবং বাসার ভেতরে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্তমান মেয়র বিএনপি সমর্থিত সংবাদ সম্মেলনে মহসিন মিয়া মধু বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীর অব্যাহত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এতে সাধারণ ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, এমন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামিম অর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, বর্তমানে শহরের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই র্যাব, পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেটসহ একটি মোবাইল টিম পৌর মেয়রের বাসার আসপাশ এলাকায় টহল দিচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, পৌর নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর উৎসবমুখর পরিবেশ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সহিংসতার না ঘটে এজন্য নির্বাচনী মাঠে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য. প্রায় ১১ বছর পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় ২৮ নভেম্বর ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ মনসুরুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি) সমর্থিত মহসিন মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী আছাদ উদ্দীন আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।