ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল রোডে ১১ দিন ধরে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ৭:৫৪ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে সিরিয়াল জটিলতা, আধিপত্য বিস্তার ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গল- ভানুগাছ রুটের ভানুগাছ সিএনজি সমিতি ও শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড মোহাজিরাবাদ সমিতি দীর্ঘ ১১দিন ধরে এই রোডে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রেখেছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীরা। দুই উপজেলার সিএনজি সমিতির সভাপতি বাদি হয়ে আদালতের মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি মামলা করছেন।
জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর সিরিয়াল জটিলতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করা নিয়ে ভানুগাছ- শ্রীমঙ্গল রুটের কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি চা বাগান গেইট সংলগ্ন এলাকায় ভানুগাছ বাজার চৌমুহনী সিএনজি গ্রæপ শ্রমিকদের সাথে শ্রীমঙ্গল সিএনজি শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ১৭ জন আহত হন। এ ঘটনার পর থেকে এ রোডে সিরিয়ালের সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় উভয় সমিতি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এই রোড দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ সিএনজি ও দুই তিন হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেন। সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে বাস, মাইক্রোবাস, টমটম ও অটোরিকশাযোগে চলাচল করছেন গত এগারো দিন ধরে। অনেক যাত্রীকে বাসের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কয়েক দফা বৈঠক করার পর কোন পক্ষ আপোষ না মেনে আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বাজারের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল স্ট্যান্ডের আহŸায়ক আব্দুর রহমান বলেন, দুই উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের স্ট্যান্ডের চালকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট আছে। আগে আমরা দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা রুজি করতাম এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রুজি রোজগার করা অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার চাই উভয় সমিতি বিষয়টি দ্রæত সমাধান করুক।
ঢাকা থেকে কমলগঞ্জে ঘুরতে আশা পর্যটক রিয়াদ আহমদ বলেন, ইচ্ছা ছিল চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ ঘুরে দেখবো। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চলাচল না করার কারণে ৫০ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ আসি অন্য এলাকার সিএনজি করে।
ভানুগাছ বাজার চৌমুহনী সিএনজির গ্রæপ কমিটির সভাপতি বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড মোহাজিরাবাদ স্ট্যান্ডের কিছু সিএনজি অটোরিকশা চালক প্রায় সময় ভানুগাছের যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে। তারা ইচ্ছা মত ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের কাছ থেকে। ৩০ টাকার জায়গায় জোর করে ৫০ টাকা ভাড়া নেয়। আমাদের সিএনজি গুলো শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরতি পথে ঠিকমত দেয় না। এইসব বিষয়ে তাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে, কিন্তু তারা কোন সিদ্ধান্ত মানেননি। পূর্বের সমস্যা থেকে তারা ১৬ নভেম্বর সিএনজি শ্রমিক নিয়ে আমাদের চালককে মেরে আহত করেছে।
শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড সিএনজি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ সুলতান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, কমলগঞ্জ থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশা গুলো আমাদের স্ট্যান্ডের কোন নিয়ম কানুন মানে না। আমাদের মাঝে সিরিয়াল নিয়ে অনেকদিন থেকে জটিলতা চলছে। এ-সব বিষয় কমলগঞ্জের সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়। তাদের সাথে জেলা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। কিন্তু তারা কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। উল্টো তারা একদল শ্রমিক নিয়ে আমাদের গাড়ি আটকে চালককে মারপিট করে আহত করে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য দুই উপজেলা সিএনজি সমিতি ও জেলা সিএনজি সমিতি আপোষ করার চেষ্টা করছেন।
মৌলভীবাজার জেলা সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ বলেন, আমরা জেলা সিএনজি চালক সমিতি ও দুই উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মিলে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, শুনেছি দুই উপজেলার সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যা চলছে। তারা যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে বিষয়টি আপোষ করে দিব। ১৬ নভেম্বরের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত করছে পিবিআই।